জীবনের প্রত্যেকটি কাজে রাসুল (সা.) অনুসরণ মুমিনের জন্য আবশ্যক। কেননা রাসুল (সা.)-এর আদর্শই উত্তম আদর্শ। রাসুল (সা.) দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীদের সঙ্গে যেসব কাজ করেছেন, মুমিন বান্দার উচিত দাম্পত্য জীবনে রাসুল (সা.)-এর সেসব সুন্নাত আঁকড়ে ধরা। ফলে একদিকে যেমন রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ হবে, অপরদিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৃদ্ধি পাবে সীমাহীন ভালোবাসা, যা সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে অন্যতম সহায়ক।
আমাদের সমাজের প্রতিটি দম্পতিই শান্তিময় জীবন কামনা করে। সংসারে বিবাদ-অশান্তি কেউ চায় না। কিন্তু দু’জন মানুষ দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার দরুন দু’জনের মধ্যে মান-অভিমান হতে পারে। তবে তা দীর্ঘায়িত হলে বা স্থায়ী কলহে রূপ নিলেই সর্বনাশ।
বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা হয় তা অটুট থাকা এবং আজীবন স্থায়ীত্ব লাভ করা ইসলামে কাম্য। সুখী দাম্পত্য জীবন মহান আল্লাহ তা’আলার একটি নেয়ামত।
আমরা আমাদের প্রতিদিনের কাজ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে একে অপরকে (স্বামী-স্ত্রী) সময় দিতে পারি না। সৌভাগ্যক্রমে আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে একটি নিখুঁত প্রতিকৃতি মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন। সেই প্রতিকৃতি অনুসরণের মাঝেই রয়েছে চূড়ান্ত সফলতা।
বস্তুত বৈবাহিক জীবনে সুখ-দুঃখ আসতেই পারে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো- সহজে নিরসণ করে নেওয়া। দাম্পত্য কলহ এড়াতে স্বামীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আদর্শ পরিবার গঠনেও তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তাই একজন আদর্শ স্বামী হতে হলে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সুন্নত ও নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই।
সুখী পরিবার গঠনের জন্য হাদিসের বিভিন্ন নির্দেশনাবলি ও পরামর্শ অনুসরণীয়। নিচে কয়েকটি আলোচনা করা হলো-
একে অপরের (স্বামী-স্ত্রী) সাথে হাস্যোজ্জ্বল থাকা
আমাদের রাসুল (সা.) বেশিরভাগ সময়ই হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। এমনকি রাসুলের (সা.) স্ত্রীরা বলতেন যে, আমরা তার থেকে বেশি হাস্যোজ্জ্বল অবয়বময় আর কাউকে দেখিনি। আর আমরা এটা ভালোই করেই জানি, যে একটি হাসি কতটা শক্তিশালী হতে পারে। স্বামী-স্ত্রী সুখে এবং দুঃখে সব সময়ই এক সাথে থাকে। সুতরাং নিজেদের মুখ কালো না করে রেখে সদা হাস্যোজ্জ্বল রাখাই হবে উভয়ের কতর্ব্য। এছাড়াও আমাদের নবী (সা.) বলেছেন, একটি হাসিও হতে পারে সদকা।
ব্যক্তিগত কাজে স্ত্রীর মতামত
সাংসারিক / ব্যবসায়ীক / চাকরির ক্ষেত্র যেকোন কাজই হোক স্ত্রীর মতামত নেওয়া উত্তম। অনেক সময় দেখা যায়- চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে সঙ্গিনীর মতামত নেওয়া হয় না। আবার অনেকে গুরুত্বও দেন না। অথচ এটা অনুচিত ও অসুন্দর।
মহানবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। তিনি শুধু ঘরোয়া বিষয়ে তাদের মতামত নিতেন তা নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ক্ষেত্রেও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। ইসলামের ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে তিনি উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.) থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। সেই মতামতের অসাধারণ কার্যকারিতা পরে। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)
যত্নশীল হওয়া ও সময় দেওয়া
পরিবারে স্রেফ নিজের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্ত্রীকে মানসিক সহযোগিতা করা ও সঙ্গ দেওয়া—আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব। স্ত্রী-সন্তানদের সব ধরনের অধিকার পূরণ করাও তার কর্তব্য। যথাযথভাবে তাদের সঙ্গে সময় ব্যয় করাও চাই।
মহানবী (সা.) তার স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘ফজরের নামাজের পর নবী কারিম (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তার চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তার প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন।’ (তাবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)
উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, ‘আমি একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে উভয় জাহানের মুক্তির পথ কী জানতে চাইলাম। উত্তরে তিনি বললেন, ‘কথাবার্তায় সংযমী হও, পরিবারের সঙ্গে তোমার অবস্থান যেন দীর্ঘ হয় এবং নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হও।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৬)
একে অপরের (স্বামী-স্ত্রী) সাথে ভালো কথা বলুন
আমাদের নবী (সা.) বলেন, যে আল্লাহকে এবং শেষ দিবসকে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। এটা স্বামীদের জন্য অবশ্য কর্তব্য, বিশেষত যখন স্বামী-স্ত্রী কাছাকাছি থাকেন। সুতরাং প্রতিদিন আপনি আপনার স্ত্রীর প্রশংসা করার চেষ্টা করুন।
একে অপরের (স্বামী-স্ত্রী) ওপর রাগ করবেন না
যখন হজরত আলী (রা.) হজরত ফাতেমাকে (রা) বিবাহ করেছেন, তখন রাসূল (সা.) হজরত আলীকে (রা.) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। উপদেশটা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যে, আমাদের নবী (স.) সেটাকে তিনবার বলেছেন। উপদেশটি হলো- পারিবারিক কোনো কারণে তুমি স্ত্রীর প্রতি রাগ করবে না।
স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঘুরতে বের হন
আমাদের রাসূল (সা.) স্ত্রীদের সাথে অনেক সময় কাটাতেন। তিনি এক ছাদের নিচে আলাদা আলাদা থাকতেন না। নবী (সা.) স্ত্রীকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হতেন। ঘুরতে যেতেন। এমনকি বিভিন্ন কাজে তার পরামর্শও নিতেন।
স্ত্রীকে আপনার ভালোবাসার কথা বলুন
আল্লাহর নবী (সা.) কখনো এটা বলতে লজ্বাবোধ করেননি। ইসলামে এমনটা বলতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা এই কথা পারিবারিক অনেক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। অথচ আজ আমাদের সমাজের অনেক স্বামী-স্ত্রী বেগানা নারী/পুরুষকে সহজে ভালোবাসার কথা বলতে পারলেও নিজের স্ত্রী/স্বামীকে ভালোবাসি বলতে লজ্জাবোধ করি।
পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন থাকা
জীবনসঙ্গিনীর সামনে নিজেকে পরিপাটি রাখা মুমিনের গুণ। নিজের ফিটনেস ধরে রাখাও আবশ্যক। স্বামীকে পরিপাটি ও গোছালো পাওয়া প্রতিটি স্ত্রীর অধিকার। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য পরিপাটি থাকতে পছন্দ করি; যেমনটা আমিও চাই স্ত্রী আমার জন্য সাজুক।’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৪৭২৮)
চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা
স্ত্রীর মানসিক প্রশান্তির জন্য বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। রাসুল (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক ও আনন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এক সফরে তিনি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন।
রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন—
তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর তিনি আয়েশা (রা.)-কে বললেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে গেলাম।
(আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)
সহানুভূতি জানানো
স্ত্রীরা কখনো অভিমান করলে বা মন খারাপ করলে— তাদের সহানুভূতি জানানো সুন্নত। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের প্রতি তেমন আচরণ করতেন। এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটু সামনে এগিয়ে যান; আর সাফিয়া (রা.) সামান্য পেছনে পড়ে যান। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহানবী (সা.) তখন নিজ হাতে তার চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন।’ (সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৯১৬২)
খুনসুটি ও সখ্য
মহানবী (সা.) তার আচার-আচরণে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। তাদের সঙ্গে নানা ধরনের খুনসুটি করতেন। এতে পারস্পরিক আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘আমি ও রাসুল (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে (দ্রুত গোসল করে পানি নিলে) আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২১)
ভালোবাসা-অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ
অনেকে আচরণ ও কাজে ভালোবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু সরাসরি কিংবা মুখে প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন। কিন্তু উচ্চারণে ও কথার মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কথা বলতেন। হৃদয়াপ্লুত কথায় তাদের মুগ্ধ করতেন।
এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) প্রিয়তমা খাদিজা (রা.) সম্পর্কে বলেছেন—
আমার মনে তার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ২৪৩৫)
আয়েশা (রা.)-এর প্রশংসা করে আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যে সারিদ যেমন সবার সেরা; নারীদের মধ্যে আয়েশা সবার সেরা।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
আন্তরিকতা বাড়াতে একে অপরকে ভালোবেসে সুন্দর নামে ডাকা
স্ত্রীদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর আচরণ-উচ্চারণ— একটি আদর্শ দাম্পত্য জীবনের শ্রেষ্ঠ উপমা। তার পবিত্র জীবনীতে স্ত্রীদের সঙ্গে আন্তরিকতা পূর্ণ ও প্রেমময় সব চিত্র দেদীপ্যমান। রাসুল-পরবর্তী সময়ে তার সম্মানিত স্ত্রীগণ আবেগ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তা বর্ণনা করেছেন। হাদিসের গ্রন্থগুলো এসবের বিশদ-ক্ষুদ্র বর্ণনা রয়েছে।
এক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো কখনো ভালোবেসে আমাকে হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)
ঘরোয়া কাজে সহায়তা করা
স্ত্রীকে ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্যও বটে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকে এটাকে লজ্জাজনক মনে করেন। অথচ এমনটা মনে করা ইসলাম সমর্থন করে না।
আসওয়াদ (রা.) বলেন, আমি একবার আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম—
রাসুল (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন, অর্থাৎ গৃহস্থালি কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো, তখন নামাজে চলে যেতেন।
(বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)
আয়েশা (রা.) অন্য বর্ণনায় বলেন, ‘তিনি নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতোই ঘরের কাজকর্ম করতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৮৯)
একই পাত্রে খাবার গ্রহণ
মহানবী (সা.) স্ত্রীর সঙ্গে একই পাত্রে খাবার গ্রহণ করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম আল্লাহর রাসুল (সা.) সেখানে তার মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৭০)
ভালো কাজের স্বীকৃতি
স্ত্রী কোনো কিছু ভালো করলে তাকে সেটির স্বীকৃতি দেওয়া চাই। খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তখন সে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন সে তার সম্পদ দ্বারা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, আল্লাহ আমাকে তার গর্ভ থেকে সন্তান দিয়েছেন যখন আল্লাহ অন্য স্ত্রীদের সন্তান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৮৬৪)
আন্তরিকতা ও অসংখ্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভরপুর ছিল রাসুল (সা.)-এর দাম্পত্য জীবন। জীবনের সবক্যিছুর মতো একজন আদর্শ স্বামীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রেখে গেছেন তিনি।
একনজরে দাম্পত্য জীবনে পালনীয় রসুল (সা.)-এর সুন্নাতসমূহঃ
১. স্ত্রী গ্লাসের যে স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করে, সে স্থানে ঠোঁট রেখে পানি পান করা সুন্নাত। (মুসলিম শরীফ হাদিস ৫৭৯)
১. স্ত্রীর থেকে চুল আঁচড়ে নেওয়া সুন্নাত। হজরত আয়েশা (র.) রসুল (সা.)-এর চুল আঁচড়ে দিতেন। (বুখারি শরিফ হাদিস ২৯৫)।
২. স্বামী-স্ত্রীর একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করা সুন্নাত। (মুসলিম শরীফ হাদিস ৬২০)
৩. স্ত্রীর প্রশংসা করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ৫২২৯, ৩৪১১)
৪. স্ত্রীর সঙ্গে খেলার প্রতিযোগিতা করা সুন্নাত। (ইবনে মাজাহ হাদিস ১৯৭৯,আবু দাউদ হাদিস ২৫৭৮)
৫. স্ত্রীর মুখের খাবার খাওয়া সুন্নাত। (মুসলিম হাদিস ৫৭৯)
৬. শাওয়াল মাসে বিবাহ করা সুন্নাত। (তিরমিযি হাদিস ১০৯৩)
৭. স্ত্রীকে সুন্দর নামে ডাকা সুন্নাত। (রসুল সা, আয়েশা রা, কে হূমায়রা বলে ডাকতেন)।
৮. স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেওয়া সুন্নাত। (আবু দাউদ হাদিস ২৮৬৪)
৯. স্ত্রীকে কখনো মারধর না করা সুন্নাত।
হজরত আবদুল্লাহ্ ইব্নু যাম’আহ (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (সা.) বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। (বুখারি শরিফ হাদিস ৫২০৪)
১০. স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কোরআন তেলাওয়াত করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ২৯৭)
১১. স্ত্রীর কাজকর্মে সহযোগিতা করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ৬৭৬)
১২. হায়েয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সাধারণ মেলামেশা করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ৩০০)
১৩. স্ত্রীর রাগ অভিমান এবং মন বোঝার চেষ্টা করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ৫২২৮)
১৪. স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা সফরে যাওয়া সুন্নাত। স্ত্রীদের সফরে নিয়ে যেতে রাসুল (সা.) লটারি করতেন, যার নাম আসত তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন। (বুখারি হাদিস ২৫৯৩)
১৫. স্ত্রীর ব্যবহার করা মেসওয়াক দিয়ে মেসওয়াক করা সুন্নাত। (বুখারি হাদিস ৫২২৬)
দাম্পত্য কলহ রোধে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দুইজন মানুষের আন্তরিকতা-হৃদ্যতা, উৎস্বর্গ ও নিঃস্বার্থতা এবং ধৈর্যের মাধ্যমেই বিনির্মিত হবে একটি সুখী পরিবার। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্রঃ বুখারি শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযি, বায়হাকি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ।/ মুসলিমস্টোরিজ.টপ
Image Source: istockphoto.com
আরো পড়ুনঃ যেভাবে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করতে বলেছেন প্রিয় নবীজি সাঃ