৩টি কাজ করলে গোসল ফরজ হয়। আবার ৪টি কাজ থেকে অব্যহতির পর গোসল ফরজ হয়। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, গোসল কী? গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো কী? আর ফরজ গোসলে করণীয় ও সর্বোত্তম পদ্ধতি কি? নবী করীম সাঃ কীভাবে ফরজ গোসল করতেন?
প্রথমেই আসি গোসল কি?
গোসল একটি আরবি শব্দ। অঞ্চলভেদে একে অনেকে গোসল করা বললেও কেউ স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। তবে মূল শব্দ আরবি “গোসল” এর অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধৌত করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধৌত করাকে ‘গোসল’ বলা হয়।
যেসব কারনে গোসল ফরজ হয়ঃ
নিচে বর্ণিত চার কারণের যে কোনে একটি সংঘটিত হলেই গোসল ফরজ হয়। তাহলো-
১. নারী-পুরুষের যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন-
وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ
‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
২. নারীদের হায়েজ/মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
৩. সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ।
৪. আর জীবতদের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।
গোসলের ৩টি ফরজঃ
উল্লেখিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে ৩টি কাজ করা ফরজ। এগুলো যথাযথভাবে আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না।
কাজ তিনটি হলো-
১. কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
২. নাকের ভেতর পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধৌত করা যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)
ফরজ গোসলের সর্বোত্তম নিয়ম হলো-
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।
২. উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৩. লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।
৪. নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।
৫. ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।
৬. অতঃপর ফরজ গোসলের তিন কাজ- কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।
৭. সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।
উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় না করা। বসে বসে গোসল করা।
৮. লোকসমাগমের স্থানে গোসল করবে না। পবিত্র জায়গায় গোসল করবে। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/৯৪)
৯. বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি ১/৫১০)
১০. নেইলপলিশ, রং, সুপার গ্লু বা আঠা জাতীয় কিছু যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি, অন্যথায় গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩)
১১. ফরজ গোসলে পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়াসহ সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে। নারীদের চুল বাঁধা থাকলে খোলা ছাড়া যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলে শুধু গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর যদি চুল খোলা থাকে তাহলে পুরুষের মতো সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/১৪২)
১২. ফরজ গোসলে নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহীতুল বুরহানি ১/৮০)
১৩. কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
বিঃদ্রঃ যদি শরীরে রোগ-বালাই বা ডাক্তারের জরুরি পরামর্শে ব্যান্ডেজ বা প্লাস্টার থাকে যা শরীর থেকে উঠালে সমস্যা হতে পারে তা না উঠিয়ে উক্ত জায়গা মাসাহ করে নিতে হবে।
রাসুল (সা.) যেভাবে গোসল করতেন
মায়মুনা (রা.)থেকে বর্ণিত আছে যে,“আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবী (সা.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে— বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন।
অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৫)”
আরো পড়ুনঃ অজুর গুরুত্ব ও ফজিলত; অজু করার বিশুদ্ধ নিয়ম ও তারতিব