আত্মশুদ্ধির জন্য যুবকদের তাবলিগে সময় দিতে বলেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খাঁন। তিনি বলেছেন, আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তাবলিগ জামাত দরকার। নিজের শুদ্ধির জন্য দরকার। তাবলিগে গিয়ে শেখা যায়। আমি গিয়ে শিখেছি। আমার বাবা তাবলিগে গিয়ে মারা গেছেন।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর এলাকায় আহমাদিয়া আরাবিয়া মাদরাসা মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে বাৎসরিক সভায় তিনি এসবকথা বলেন।
এসময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি তাবলিগের সাথী। তাবলিগে দুই ভাগে বিভক্তি থাকবে না। তাবলিগে এখন যে ব্যবধানটা দেখছেন যেমন দুই ভাগে বিভক্ত, এগুলো থাকবে না। জ্ঞানের বুঝ আল্লাহ যখন দেবেন…অবশ্যই আল্লাহ এর সমাধান করবেন। এর মানে এই না তাবলিগ খারাপ।’
তিনি বলেন, ‘তাবলিগের মধ্যে যারা আছেন তাদের মধ্যে হয়তো দ্বিধাদ্বন্দ্ব হয়েছে সাময়িকভাবে। তাদের সামাধান আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই করবেন। যুবকদের কাছে অনুরোধ আল্লাহকে পেতে হলে তাবলিগে সময় দাও।’
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্রঃ জাগোনিউজ
সৌদি আরবে তাবলিগ জামাত ‘নিষিদ্ধের’ নিন্দা
তাবলিগ জামাতকে সৌদি আরব নিষিদ্ধ করেছে জানিয়ে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আল-হাইআতুল উলয়া, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনগুলো বলেছে, তাবলিগ জামাতকে ‘সন্ত্রাসবাদের অন্যতম দ্বার’ আখ্যায়িত করে সৌদি আরবের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধের কথা জানিয়েছে।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনগুলো বলছে, সম্প্রতি সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী জুমার নামাজের খুতবায় তাবলিগি ও দাওয়াহ গ্রুপ সম্পর্কে মুসল্লিদের সতর্ক করতে সে দেশের মসজিদ ও মসজিদের প্রচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনায় তাবলিগ জামাতকে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করতে বলা হয়। এই গোষ্ঠীর পথভ্রষ্টতা, বিচ্যুতি এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় মসজিদের খতিবদের।
এক বিবৃতিতে তাবলিগ জামাতের বিষয়ে সৌদি পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সৌদি সরকারের প্রজ্ঞাপনের বক্তব্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান-ভারত উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের তৌহিদি জনতা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। এর ফলে সারা বিশ্বে এই কাজে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রবণতা দেখা দিতে পারে এবং তাতে মুসলমানদের শত্রুরাই খুশি ও লাভবান হবে।
বিবৃতিতে মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ইমান, ইসলাম ও ইহসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে তাবলিগের মেহনতের ফলে। তাই সৌদি আরবের আলেমদের উচিত তাবলিগের কাজ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলে মন্তব্য করা। ইনসাফের স্বার্থেই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সৌদি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিবৃতিতে বেফাক সভাপতি উল্লেখ করেন, তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞার খবরে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নূমানী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দারুল উলুম দেওবন্দ এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ও জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগরের মহাপরিচালক মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমানও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তাবলিগ জামাত বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নির্ভেজাল, দাওয়াতি সংগঠন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দারুল উলুম দেওবন্দের এক সুযোগ্য সন্তান শায়খ মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)–এর হাতে এই জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। এই জামাতের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া, সুন্নতের অনুসরণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেওয়া। সৌদি সরকার এই জামাতের বিরুদ্ধে কবর পূজা, শিরক বা জঙ্গিবাদের যে অপবাদ দিচ্ছে, তা জঘন্য অপবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
হেফাজতের দুই নেতা সৌদি সরকারকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা যেন না নেয়, যা তাদের ন্যায়বোধকে বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মুহিউদ্দীন রাব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাঈল নূরপুরী সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।