নিসফ অর্থ সমান অর্ধেক। আর ইনসাফ অর্থ সমান দুই ভাগ করা, বেশি বা কম না করা। আল্লাহ তাআলার একটি নাম হলো ‘আদল’ অর্থাৎ ন্যায়বান, ন্যায়পরায়ণ। আদালত অর্থ ন্যায়ের স্থান। মুমিন জীবনের পূর্ণতার জন্য তাকওয়া বিশেষ শর্ত; তাকওয়ার পরিচায়ক হলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার।
মানবজীবনে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অত্যধিক। পবিত্র কোরআন কারিমে প্রথম সুরা ফাতিহার তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, ‘তিনি বিচার দিবসের মালিক,’ যা আমরা প্রত্যহ দিবারাত্রি বহুবার পাঠ করে থাকি।
সভ্য সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো বিকল্প নেই। সুবিচারপ্রাপ্তি সব নাগরিকের অধিকার এবং ন্যায়বিচার আল্লাহর হুকুম। এটি ফরজ ইবাদত।
কোরআনে কারিমে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)।
ন্যায়ের বিধান সর্বকালের ও সব সমাজের জন্য। সব আসমানি কিতাবে এই নির্দেশ রয়েছে, ‘স্মরণ করো দাউদ ও সোলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে, তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ, আমি প্রত্যক্ষ করতে ছিলাম তাদের বিচার।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৭৮)। ‘নিশ্চয়ই আমি “তাওরাত” অবতীর্ণ করেছিলাম; তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদিদের তদনুসারে বিধান দিত, আরও বিধান দিত রব্বানিগণ এবং বিদ্বানগণ, কারণ তাদের আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর সাক্ষী। আমি তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়ে ছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের বদলে অনুরূপ জখম। অতঃপর কেউ তা ক্ষমা করলে তাতে তারই পাপমোচন হবে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই জালিম। ইঞ্জিল অনুসারীরা যেন আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই ফাসিক।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৪-৪৭)।
কোরআন তথা ধর্মীয় বিধানের উদ্দেশ্য হলো মানবকল্যাণ। তথা জীবন সুরক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশ সুরক্ষা এবং এরই মাধ্যমে ধর্ম সুরক্ষা। কোরআনের বর্ণনা, ‘কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি করো, তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ না করো এবং তাদের সম্বন্ধে সতর্ক হও, যাতে আল্লাহ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রেখো যে তাদের কোনো কোনো পাপের জন্য আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী। তবে কি তারা জাহিলি যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৪৮-৫০)।
আল্লাহর একটি নাম ‘হাকিম’ বা ন্যায়বিচারক, তিনি ‘আহকামুল হাকিমিন’ অর্থাৎ সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। মানুষকে আল্লাহ তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে ন্যায়বিচারের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। সুবিচার মানবিক চাওয়া এবং ইবাদত, ‘এবং দাউদের নিকট পৌঁছাল, তখন তাদের কারণে সে ভীত হয়ে পড়ল। তারা বলল, ভীত হবেন না, আমরা দুই বিবদমান পক্ষ—আমাদের একে অপরের ওপর জুলুম করেছে, অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করুন, অবিচার করবেন না এবং আমাদের সঠিক পথ নির্দেশ করুন।’ আল্লাহ বললেন, ‘হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার করো এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ কোরো না, কেননা এটা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচার দিবসকে বিস্মৃত হয়েছে।’ (সুরা-৩৮ সদর, আয়াত: ২২ ও ২৬)।
ন্যায়বিচারের ফযীলত
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে কেবল বৈধই নয় বরং ফরযে কিফায়াহ। এর মাধ্যমে আর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকারের ন্যায় একটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধিত হয়। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জালিমকে প্রতিহত করা ও মজলুমকে সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং অধিকারকে তার যথাযথ প্রাপকের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। ন্যায়বিচার মানুষকে সংশোধনের পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে, দু’পক্ষের মাঝে বিবাদ মিমাংসা করে। সুতরাং ন্যায়বিচার একটি কল্যাণকর ও পূণ্যের কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। যারা ন্যায়বিচার করেন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভালোবাসেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “যদি তুমি বিচারকার্য সম্পাদন কর তাহলে ন্যায়পরায়নতার সাথে করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা ন্যায়পরায়ণ বিচারকদের ভালোবাসেন। (সুরা মায়েদাঃ আয়াত ৩৩)
ন্যায়বিচারের গুরুত্ব ও ফযিলত অনেক বেশী বলেই যদি কোন বিচারক ন্যায়বিচারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা সত্বেও ভুল করে ফেলে তবুও সে সাওয়াবের অধিকারী হবে। এব্যাপারে ইমাম বোখারী ও মুসলীম বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, “যখন কোন বিচারক বিচার করেন, আর ন্যায়বিচারের চেষ্টা করেন, অতপর যদি ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি দ্বিগুণ প্রতিদান পাবেন। আর কোন বিচারক যখন বিচার করেন, আর চেষ্টা করার পরও যদি তিনি ভুল করে ফেলেন, তাহলে তিনি একগুন প্রতিদান পাবেন।” (লু’লূ ওয়াল মারজান ফিমা ইত্তাফাকা আলাইহিশ শায়খান-মুহা:ফুয়াদ আব্দুল বাকী সংকলিত খন্ড: ২ পৃ: ১৯৫)
অপর এক হাদীসে আম্মাজান হযরত আয়শা রা: থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “তোমরা কি জান, কারা কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে? উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এব্যাপারে অধিক অবগত। তখন তিনি বললেন, তারা হল ঐ সমস্ত লোক যাদেরকে তাদের প্রাপ্য হক দেওয়া হলে তারা সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করে। আর যদি আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানানো হয় তাহলে তারা ব্যয় করে। আর অপরাপর মানুষের জন্যও তারা সেরুপই ফায়সালা করে নিজের জন্য যেরুপ ফায়সালা করে।” (মুসনাদে আহমদঃ ৬/৬৬)
হযরত মা’কাল ইবলে ইয়াসার রাঃ বর্ণনা করেছেন যে- নবী সা. আমাকে এক সম্প্রদায়ের বিচারকার্য সম্পাদন করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি খুব ভালো বিচার করতে পারিনা অর্থাৎ আমি একাজে খুব দক্ষ নই। তখন তিনি বলেছেন, আল্লাহ বিচারকের সঙ্গে থাকেন যতক্ষণ না সে ইচ্ছা করে কারো উপর জুলুম করে। (মুসনাদে আহমদঃ ৫/২৬)
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সা: বলেছেন “কোন ন্যায়বিচারকের একদিন আপন প্রজাদের মাঝে আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কাজে নিরত থাকা কোন আবেদের আপন পরিজনের মাঝে একশত বৎসর কিংবা পঞ্চাশ বৎসর ইবাদতে নিরত থাকার চেয়ে উত্তম।” (যাওয়ায়িদু মুসনাদে হারেস ইবনে আবি উসামা হাদীস নং-৫৯৭)
উপরের সবগুলো বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে বিচারকের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানজনক এবং এটি একটি কল্যাণকর কাজ। এটি কেবল বৈধই নয় বরং অবশ্যপালনীয় একটি দায়িত্ব। যদি এ দায়িত্ব কেউ পালন না করে তাহলে সকলেই গুনাহ্গার সাব্যস্ত হবে।
বিচারকের আসন অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও সংবেদনশীলঃ
বস্তুত: বিচারকের দায়িত্ব ঝুঁকিপূর্ণ, স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল একটি দায়িত্ব। কেননা এক্ষেত্রে বূল সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তিমনি সরকার ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারনে বিচারকের বিব্রত হওয়ার এবং আইনের অপব্যবহারের সম্ভাবনাও এক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে। আবার বিচারক নিজে স্বর্থবাদীতার শিকার হয়ে পক্ষপাতিত্ব করার সম্ভাবনা ওযমন এখানে য়েয়েছে তেমনি প্রলোভনের শিকার হয়ে ন্যায়বিচারের পথ থেকে সরে আসার সম্ভাবনাও এক্ষেত্রে প্রবল। অথচ ন্যায়বিচার করতে বিচারক যদি ব্যর্থ হন তাহলে হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ দুটোই মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর জেনেশুনে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী কোন কিছু করলে পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে বিচারককে কটিন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।
বিচারকের দায়িত্ব যে ঝুঁকিপূর্ণ তা রাসূল সাঃ উম্মতের সামনে স্পষ্ট করে দিযেছেন এবং এ দায়িত্ব যে খুবই স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল, সামান্য অবহেলার কারনে বিরাট ক্ষতির আশংকা রয়েছে, আবার ন্যায়বিচার করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা এমনকি সরকারের রোষানলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তদুপরি অহেতুক মানুষের সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে-তা তিনি বিভিন্ন হাদীসে পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “যে বিচারকের দায়িত্ব লাভ করল বিংবা যাকে বিচারকের দায়িত্ব প্রদান করা হল তাকে যেন ছুরি ছাড়া জবাই করা হল।” (তাকমিলাতু ফতহুল মুলহিম খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৯)
হযরত ইবনে উমর রা: বর্ননা করেছেন যে, “আমি রাসূল সাঃ কে এরুপ বলতে শুনেছি, যেব্যক্তি বিচারক নিযুক্ত হল, সে যদি ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করে তাহলে সে হয়ত (কেয়ামতের দিন) পাপ-পূন্য কোন কিছুর ভাগী না হয়ে কোনমতে অব্যহতি পেয়ে যেতে পারে।” (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৩২২)
হযরত বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাঃ বলেছেন, “দুই শ্রেনীর বিচারক জাহান্নমী হবে আর এক শ্রেনীর বিচারক জান্নাতী হবে।”
১. যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে অন্যায় বিচার করবে, সে জাহান্নামী।
২. যে বিচারক বিচারের জ্ঞান রাখেনা; ফলে সে উল্টাপাল্টা বিচার করে মানুষের হক্ব ও অধিকার নষ্ট করেঝে, সেও জাহান্নামী।
৩. যে বিচ্রক ন্যায়সঙ্গত বিচার করেছে, সে জান্নাতী। (আবু দাউদ হাদীস নং ২৫৭৩)
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আল-কোরআনের নির্দেশঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ لِلّٰهِ شُهَدَآءَ بِالۡقِسۡطِ ۫ وَ لَا یَجۡرِمَنَّکُمۡ شَنَاٰنُ قَوۡمٍ عَلٰۤی اَلَّا تَعۡدِلُوۡا ؕ اِعۡدِلُوۡا ۟ هُوَ اَقۡرَبُ لِلتَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۸﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দন্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সুরা নহল: আয়াত ৯০)
সুরা নিসায় আল্লাহ বলেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهۡلِهَا ۙ وَ اِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِهٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা নিসা: আয়াত ৫৮)
سَمّٰعُوۡنَ لِلۡکَذِبِ اَکّٰلُوۡنَ لِلسُّحۡتِ ؕ فَاِنۡ جَآءُوۡکَ فَاحۡکُمۡ بَیۡنَهُمۡ اَوۡ اَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ ۚ وَ اِنۡ تُعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ فَلَنۡ یَّضُرُّوۡکَ شَیۡئًا ؕ وَ اِنۡ حَکَمۡتَ فَاحۡکُمۡ بَیۡنَهُمۡ بِالۡقِسۡطِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ
তারা মিথ্যার প্রতি অধিক শ্রবণকারী, হারামের অধিক ভক্ষণকারী। সুতরাং যদি তারা তোমার কাছে আসে, তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা কর অথবা তাদেরকে উপেক্ষা কর আর যদি তাদেরকে উপেক্ষা কর, তবে তারা তোমার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না, আর যদি তুমি ফয়সালা কর, তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা কর ন্যয়ভিত্তিক। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যয়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (সুরা মায়েদা: আয়াত ৪২)
পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করাই মহানবীর (সা.) আগমণের উদ্দেশ্য এবং তিনি নিজ আমল দ্বারা সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষমও হয়েছিলেন।
পবিত্র কোরআনে যেভাবে বলা হয়েছে ‘বল, আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন’ (সুরা আরাফ: ২৯)।
আল্লাহ তা’আলার অনুপম শিক্ষা এবং ইসলামের সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তীর বহিঃপ্রকাশ তখনই সম্ভব হবে, যখন প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহপাকের প্রতিটি আদেশের ওপর আমল করবে।
ন্যায়বিচারের আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের ঘর, সমাজ, আপন-পর, এমনকি শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার সাথে ন্যায়সূলভ ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা মহানবীর (সা.) প্রকৃত অনুসারী বলে দাবি করতে পারি।
এছাড়া কেবল শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মতের দাবি করার কোন মূল্য নেই, আমাদের কর্মের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে।
সর্বক্ষেত্রে আমরা যখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব, তখনই আমরা আল্লাহর প্রেমিকও হতে পারব আর খায়রে উম্মত হিসেবে নিজদেরকে প্রকাশ করতে পারব এবং আল্লাহর দরবারে মুমিন হিসেবে বিবেচিত হব।
ইসলামি বিধানে বিচার আদালতের মাধ্যমে অথবা আদালত কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘ দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিধেয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচারিক কার্য সম্পাদনের এখতিয়ার রাখে না। এতে জুলুম ও বিশৃঙ্খলার অরাজকতার সমূহ আশঙ্কা বিদ্যমান। মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, খুন, গুম বন্ধ করা এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
আরো পড়ুনঃ অজুর গুরুত্ব ও ফজিলত; অজু করার বিশুদ্ধ নিয়ম ও তারতিব