হাদীসে আছে কেয়ামতের আগে আকাশ থেকে একটি বিকট শব্দ হবে। সেটি হবে ক্বেয়ামতের লক্ষণ। ভয়ংকর সেই শব্দের পর মানুষের অবস্থা কি হব? ক্বেয়ামতের পূর্বে শেষ রমজান কেমন হবে? ২য় রমজানের চাঁদ কি কেয়ামতের লক্ষণ?
সেই রমজানই হবে পৃথিবীর বুকে আদম সন্তানের কাটানো শেষ রমজান। সেই রমজানের আলামত কি রকম হবে? তখন সাধারন মানুষের অবস্থা কি হবে? কেয়ামতের শেষ দিকের অবস্থা কেমন হবে? এই বিষয়ে কোরআন হাদীসে বহু নিদর্শনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।সেসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচনা থাকবে এই পর্বে।
সাদীসে এসেছে
কেয়ামতের শেষ সময়ে শাম দেশ থেকে একটা মৃদু বাতাস আসবে। যে বাতাসে পৃথিবীর সকল ঈমানদার মানুষের মৃত্যু হয়ে যাবে। এমনকি যার মধ্যে সামান্য পরিমানও ঈমান থাকবে সেও মারা যাবে। সেময় কেউ যদি পাহাড়ের গুহার মধ্যেও লুকিয়ে থাকে তার শরীরেও সেই বাতাস লাগবে। দুনিয়াজুড়ে তখন আল্লাহের নাম নেওয়ার কেউ থাকবে না।
সেসময় পৃথিবীর বুকে মূর্তি পূজা বেড়ে যাবে ব্যাপকহারে। রাস্তাঘাটে মানুষ যিনায় লিপ্ত হবে। এখন প্রশ্ন হলো সেই সময় কতদূর? সেই সময় পৌঁছানোর আগে পৃথিবীতে ক্বেয়ামতের অনেক ছোট ছোট আলামত দেখা দিবে। সেই ছোট ছোট আলামতের অনেকগুলোই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি!
যেমনঃ
হাদীসে বলা হয়েছে আরব বেদুইন যারা এক সময় খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতো তাদের বড় বড় ইমারত হবে যা আমরা বর্তমান আরব বিশ্বে দেখতে পাই।
কালো সোনা অর্থাৎ পেট্রোলের ক্ষণি বের হবে যা ইতোমধ্যেই বের হয়ে গেছে।
অন্য এক হাদীসে এসেছে ক্বেয়ামতের পূর্বে সময়ের বরকত কমে যাবে! বর্তমান সময়টা ঠিক তাই! মানুষ এখন বলে এক সপ্তাহ কি করে কেটে গেল!
হাদীসে বলা হয়েছে বড় বড় নকশা করা বাড়িঘর হবে!
লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ করবেনা । বর্তমান সমাজে কে কত সুন্দর ও নান্দনিক ডিজাইনের মসজিদ করতে পারে ও গর্ব করে বলতে পারে সে প্রতিযোগীতা চলছে কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে সেই মসজিদ আবাদের প্রতিযোগীতা নেই।
ফোরাত নদী শুকিয়ে গেছে, আরব দেশ সবুজ শ্যামল হয়ে গেছে।
মানুষের মধ্যে মিথ্যা, পাপাচার, জিনা, ব্যভিচার, আমানতের ক্ষেয়ানত বেড়ে গেছে।
সুদ ছড়িয়ে পড়বে
বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাবে
সমাজে মদ্যপান বেড়ে যাবে
মানুষ হত্যা বেড়ে যাবে । রাসূল (ছাঃ) বলেন
وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ يَدْرِى الْقَاتِلُ فِىْ أَىِّ شَىْءٍ قَتَلَ وَلاَ يَدْرِى الْمَقْتُولُ عَلَى أَىِّ شَىْءٍ قُتِلَ
ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে’
ভূমিকম্প বৃদ্ধি: ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল ভূমিকম্পের ব্যাপকতা। এমন এক সময় আসবে যখন ঘন ঘন ভূমিকম্প হবে। তখন বুঝতে হবে যে, ক্বিয়ামত ঘনিয়ে এসেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، ‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্ম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে’
রাসূল সাঃ বলেছেন ক্বেয়ামতের পূর্বে যিনা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়বে।
অন্য এক হাদীসে এসেছে ক্বেয়ামতের পূর্বে দাসী তার মুনীবকে জন্ম দিবে, এখন আমরা দেখছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সারোগ্যাসি পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম হচ্ছে।
এসব ছোট ছোট আলামতের পরেই আসবে বড় বড় আলামত!
প্রথমেই ইমাম মাহাদি আঃ এর আগমন ঘটবে।
দাব্দাতুল আরদ বা ভূগর্বস্থ অদ্ভুদ প্রানীর আবির্ভাব হবে। এরপর পৃথিবীতে আরও বাকি থাকবে ১২০ বছর।
হাদীসে বর্ণিত আছে তখন বছর যাবে মাসের মত! মাস যাবে সপ্তাহের মত! আর সপ্তাহ যাবে দিনের মত!
এমন করেই আসবে আদম সন্তানের জন্য শেষ রমজান! তখন লোকেরা আকাশ থেকে একটি বিকট শব্দ শুনতে পারবে। এই শব্দ এতটাই ভয়ংকর হবে যে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীরা ভয় পেয়ে যাবে। সবই আতঙ্কিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করবে, একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে আওয়াজের রহস্য বের করার চেস্টা করবে।
কিন্তু তারা সেই আওয়াজের রহস্য বের করতে ব্যর্থ হবে। সেই রমজানের পর থেকেই মানু ঘরে খাদ্য মজুদ শুরু করে দিবে কেননা সেই আওয়াজের পর জমিনে আর কোন ফসল ফলবে না, পৃথিবীতে ব্যপক আকারে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, মানুষ অনাহারে দিন কাটাতে থাকবে।
সর্বশেষ আসবে এক শুক্রবার যেদিন সূর্য উদিত হবে পশ্চিম দিকে এরপর আর কারও তাওবা কবুল হবে না।
এর পরই আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে ভয়াবহ ক্বেয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কেয়ামতের ছোট-বড় সকল ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।