সহিহ বুখারির: ১০/২১৩ এর বর্ণনামতে রাসুল (সা.) বলেছেন, বদ নজর সত্য। অর্থাৎ এর বাস্তবতা বা কুপ্রভাব আছে। বদনজর অমূলক ভিত্তিহীন কোনো ধারণা নয়। আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা বদনজরের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর, কারণ তা সত্য। (ইবনে মাজা: ৩৫০৮)
বদনজর আমলে নেওয়ার নজির কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহর নবি ইয়াকুব (আ.) তার ছেলেদের একসাথে মিশর শহরে না প্রবেশ করে আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছিলেন; যেন তারা মানুষের হিংসা ও বদনজরের শিকার না হন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُتَفَرِّقَةٍ وَمَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ، وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُمْ مَا كَانَ يُغْنِي عَنْهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থঃ সে বলল, আমার ছেলেরা, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হুকুম একমাত্র আল্লাহরই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করছি এবং তাঁরই ওপর যেন সবাই ভরসা করে।’ আর যখন তারা প্রবেশ করল, যেভাবে তাদের পিতা তাদের আদেশ করেছিল, তা আল্লাহর হুকুমের বিপরীতে তাদের কোনো উপকারে আসেনি, তবে তা ছিল ইয়াকুবের মনের একটি ইচ্ছা, যা সে ব্যক্ত করেছিল। আর সে ছিল জ্ঞানী, কারণ আমি তাকে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৬৭-৬৮)
কোরআনের ব্যখ্যাকাররা বলেছেন, এখানে ইয়াকুব (আ.) বদনজরের আশংকায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে মিশরে প্রবেশ করতে বলেছিলেন।
সুতরাং বদনজরকে ভিত্তিহীন মনে না করে এটা থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হবে। বদনজর লেগে গেলে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা, কোরআন হাদিসে বর্ণিত দোয়ার মাধ্যমে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে।
বদনজর প্রতিরোধ করতে যা করবেন
১. বদনজর থেকে বাঁচতে সকালে ও সন্ধ্যায় সাতবার করে নিয়মিত এই দোয়া পাঠ করুন:
أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة ومن كل عين لامة
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাত দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি। (সহিহ বুখারি)
২. সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে বুলিয়ে দিন।
৩. সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করুন:
بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الأرض ولا في السماء وهو السميع العليم
আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সাথে পৃথিবীর ও আকাশের কোনো জিনিস ক্ষতিসাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা। (সুনান আবু দাউদ, সুনান তিরমিজি)
৪. কোনো কিছু দেখে ভালো লাগলে সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ বলুন। তাহলে আপনার নজরের ক্ষতিকর প্রভাব ওই ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর পড়বে না।