আমরা সবাই চাই সুস্থতার সাথে জীবনযাপন করতে। কিন্তু সুস্থতা-অসুস্থতা মিলিয়েই আমাদের জীবন। ফলে অসুস্থতা পেয়ে বসে নানা সময়ে। আর অসুস্থতা জীবনযাত্রা অস্থিতিশীল ও অসহনীয় করে তোলে। কেউ অস্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায় না। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের কারোরই চেষ্টায় কমতি থাকে না। ইসলামের আলোকে একজন মুসলিমের উচিৎ দ্রুত সুস্থ হওয়ার আমল করা।
অসুস্থ হলে ইসলাম প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। পাশাপাশি রোগীকে অসুস্থতার দরুণ বিপুল সওয়াবের সুসংবাদও দিয়েছে।
কেউ অসুস্থ হলে, সুস্থতার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির দোয়া করতে হয়। তার কাছে বলতে হয়, যেন তিনি সুস্থ করে দেন। মানুষ অসুস্থ হয়ে যখন দোয়া করে কিংবা অসুস্থ কারও জন্য দোয়া করে, তখন আল্লাহ তা’আলা সুস্থতার নেয়ামত দান করেন।
অসুস্থ হলে পড়ার জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি দোয়া শিখিয়েছেন। কেউ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তা’আলা অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।
আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক করতেন। দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী—আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪২)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করা জরুরি
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সেবাই সর্বোত্তম কাজ। সেবাদানকারী ব্যক্তিই অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করবেন। অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতায় সেবাকারীর ব্যক্তির দোয়ার বিকল্প নেই। অসুস্থ ব্যক্তির সেবায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী করতেন? রোগীর সেবা করার নিয়ম কি আমরা জানি? হাদিসের বর্ণনায় তা ফুটে ওঠেছে-
‘হজরত আয়েশা বিনতে সাদ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! সাদকে আরোগ্য করে দাও।’
অসুস্থ ব্যক্তির সেবায় করণীয়


অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার আগে তাঁর সেবা করা জরুরি। আর সেবাদানকারী ব্যক্তির সেবা করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে তার সুস্থতা কামনায় নাম উল্লেখ করে বেশি বেশি দোয়া করা। হাদিসের বর্ণনায় আরও ওঠে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোনো রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর কাছে যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে আনা হতো; তখন তিনি বলতেন-
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণঃ ‘আজহাবিল বাসা রাব্বাননাসি, ইশফি ওয়া আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইয়ুগাদিরু সাক্বামা।’
অর্থঃ ‘কষ্ট দূর করে দাও, হে মানুষের রব! আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার সুস্থতা ছাড়া অন্য কোনো সুস্থতা নেই। এমন সুস্থতা দান কর তা যেন সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
মনে রাখতে হবে
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ওষুধ ও দোয়া ছাড়া সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হলো তার যত্ন নেয়া। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-শুশ্রুষা করার পাশাপাশি ওষুধ এবং তাঁর নাম উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এটিই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া করার নিয়ম।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অসুস্থ ব্যক্তির সর্বোচ্চ সেবা করা। অসুস্থ ব্যক্তির এ সেবাকে আল্লাহর ইবাদতে পরিণত করা। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নাম উল্লেখ করে বেশি বেশি দোয়া করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা ও দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Image Source: pixabay
আরো পড়ুনঃ সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে নবীজীর (স.) যেসব সুন্নত মেনে চলবেন