একজন মুমিনের জন্য রমজানের প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। সিয়াম সম্পর্কে বহু মানুষের ধ্যানধারণা পাল্টে গেছে। তারা এই মাসকে নানা রকম পানাহার, মিষ্টি ও হালুয়া-রুটি বিতরণ, রাতজাগা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার মৌসুম বানিয়ে ফেলেছে।
এর জন্য তারা রমজান মাসের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে; এই আশংকায় যে-কিছু খাদ্যদ্রব্য কেনা বাদ পড়ে যেতে পারে অথবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এভাবে তারা খাদ্যদ্রব্য কেনা, হরেক রকমপানীয় প্রস্তুত করা এবং কী অনুষ্ঠান দেখবে, আরকী দেখবেনা সেটা জানার জন্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রোগ্রামসূচি অনুসন্ধান করার মাধ্যমে এর জন্য প্রস্তুতি নেয়। অথচর মজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই তারা অজ্ঞ। তারা এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি ও চক্ষুবিলাসের মৌসুমে পরিণত করে।
অপরদিকে কিছু মানুষ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন। তারা শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ শাবান মাসের আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
রমজানের কল্যাণ লাভ মুমিনের পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাই রমজান মাস আসার আগেই মুমিন-মুসলিমগণ এর ফজিলত হাসিলের জন্য নিজেকে তৈরি করে থাকেন। আর আল্লাহর কাছে বলতে থাকেন হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত নেক হায়াত দান করুন। বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দিন। যেন রমজান আমার জীবনে সমস্ত অপূর্ণতার গ্লানি মুছে দিয়ে ঈমানের পূর্ণতায় ভরিয়ে দেয়। রমজান শেষে মুমিনের পেরেশানি আরো বেড়ে যায়। তাই তারা বলতে থাকেন, হে আল্লাহ, রমজানে আমরা যা আমল করেছি তা আপনি কবুল করে নিন।’
মহানবী সা: রমজানের দুই মাস আগে থেকেই রমজান প্রাপ্তির জন্য দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন। আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস নম্বর ৩৮১৫)
রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে মহানবী সা: শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘নবী করিম সা: (প্রায়) পুরো শাবান মাসই নফল রোজা পালন করতেন। (মুসলিম, হাদিস নম্বর- ২৭৭৯)
তবে রমজানের দু-এক দিন আগে থেকেই মহানবী সা: রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে কেউ আগে থেকে রোজা রাখায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার বিষয়টি আলাদা। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রমজানের এক দিন বা দুই দিন আগে রোজা না রাখে। তবে আগে থেকে এ দিনে রোজা রাখার কেউ অভ্যস্ত হয়ে গেলে সে ওই দিনও রোজা রাখতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর- ১৮১৫)
রমজান রহমত, বরকময় ও নাজাতের মাস। পুণ্য হাসিলে এর চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ আর কিছু হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘রমজান মাস এমন একটি মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যে কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই হিদায়াত ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সম্বলিত। যা সঠিক পথ দেখায়, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১৮৫)
নবী করিম সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাস এলেই জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানদের বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ১০৭৯)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে রাতে ও দিনে জাহান্নামিদের মুক্তি দিয়ে থাকেন। এভাবে রমজানের প্রতি দিন ও রাতে মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ৬৬৪)
আল্লাহর কোনো বান্দা যদি নেক উদ্দেশ্যকে অন্তরে ধারণ করে আর সঠিক নিয়তের সাথে উত্তম পন্থায় কর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তার সেই আমলকে কখনো বরবাদ করে দেন না। বরং সেটি সাদরে গ্রহণ করে তার যথাযথ পুরস্কার দিয়ে থাকেন। তাকে সেই কাজ করার ধৈর্য, সততা ও একনিষ্ঠতা দান করে থাকেন।
সামনে এমন এক মাস, যে মাসের একটি রাতকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। যে মাসের যে কোনো পুণ্য ও কল্যাণময় কাজের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান। আর একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান করে বান্দার আমলনামায় লিখে দেওয়া হয়।
আগাম প্রস্তুতি : মুমিনের ইবাদত হবে সার্বক্ষণিক। সে সবসময় আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে থাকবে। উত্তম সময়গুলোকে বেশি করে কাজে লাগাবে। আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ অনুগ্রহে বান্দাকে এমন কিছু সময় উপহার দিয়েছেন, যার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বান্দা সম্মানের উচ্চ মাকামে পৌঁছে যেতে পারে। তেমনি একটি মাস রমজান।
ইবাদতে পূর্ণতা লাভে বান্দার এক অনন্য সুযোগ। অন্যান্য মাসে ইবাদত তো করবই তেমনি এই মাসটির বিশেষ মর্যাদাকে নিজের জীবনে অবশ্যই কাজে লাগাব। তাই রমজান আসার আগেই এ মাসের কল্যাণ হাসিলের মানসিকতায় নিজেকে বলীয়ান করব। বেশি বেশি দোয়া, দুরুদ, তাওবা-ইস্তেগফার ও ইসলামী জীবনযাপনের মাধ্যমে রোজার শিক্ষাকে নিজের জীবনে ধারণ করব।
আর মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বলতে থাকব, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও। তোমার অনুগ্রহ না পেলে আমরা তো জাহান্নামি হয়ে যাব। কেউ আমাদের ওই কঠিন আজাব থেকে বাঁচাতে পারবে না। একমাত্র তুমিই পারো, আমাদের পাপ রাশিকে মুছে দিয়ে তোমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিতে। এভাবে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করুন। মন নরম হয়ে যাবে। ইবাদতে শান্তি পাবেন। অন্যায় থেকে ফিরে আসবেন। চাইলেও শয়তান আপনাকে দিয়ে আর পাপ কাজ করাতে পারবে না। কারণ আপনি আল্লাহর হয়ে গেছেন। আর যে আল্লাহর হয়ে যায় তার ক্ষতি করার সাধ্য কারো নেই।
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি : রমজান মাসের ফজিলত হাসিলের জন্য নিজের মনের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমলের খাতায় উত্তম আমলগুলো একের পর এক যোগ করতে হবে। আমলগুলো আল্লাহর কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যেখানে নিয়তে কোনো গড়বড় থাকবে না। উদ্দেশ্য একটাই, আল্লাহকে রাজি-খুশি। তাই এখনি সংকল্প করুন, নিজের জীবনটাকে আল্লাহর বিধানের বাইরে নিয়ে যাবেন না। তবে আপনার রমজান আপনার জন্য অমর শিক্ষা রেখে যাবে।
আল্লাহর দেওয়া ঘোষণা আপনার জন্য পূর্ণ করা হবে। রমজান চলে যাবার পরেও এই অনুশীলন আপনি ভুলে যাবেন না। রমজান মাসে আপনার গুনাহ মাফের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে ঠিকই, এ ক্ষেত্রে আপনি সফলও হবেন, অন্য দিকে রমজান আপনাকে পূর্ণ ইমানের অধিকারী সাচ্চা মুসলিম বানিয়ে দেবে। কাজে আপনার সততা থাকবে।
হারামের ধারেকাছেও যাবেন না। এমনকি আল্লাহর বিধানের লঙ্ঘনও করবেন না। আপনার মহব্বত থাকবে সত্য ও সুন্দরের প্রতি। পুণ্যের দিকে। এই মানসিক অবস্থায় যখন আপনি চলে যাবেন, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবেন না। আল্লাহর অসীম দয়ায় আপনার নাজাতও মিলে যাবে।
ক্ষমার অতৃপ্ত বাসনা : আল্লাহর রহমত কে না চায়? জানবেন, তিনি ছাড়া মানুষকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা অন্য কারো নেই। হয়তো এই সূক্ষ্ম কথা আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনার চাওয়া আল্লাহর বিধানের অনুরূপ হয়নি বিধায় তিনি আপনার মনের ইচ্ছেকে পূরণ করছেন না। তাই বলে, ভেঙে পড়া, নিরাশ হওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, আল্লাহ অবশ্যই সেই ক্ষমতা রাখেন, যিনি অতীতের ঘাটতি ও বর্তমানের পূর্ণতার সমন্বয়ে বান্দাকে অগণিত দান করতে পারেন।
রমজানকে সামনে রেখে মনের চাওয়াকে আরো প্রশস্ত করতে হবে। এর সাথে তৈরি থাকবে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি ও উত্তম আমলের সুন্দর মানসিকতা। তাই আপনার ইবাদতগুলোকে আল্লাহর সামনে এমনভাবে পেশ করতে হবে, যে ইবাদতে কোনো ধরনের শিরক থাকবে না। নিজের অন্তর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকবে। তাহলে রোজা অবশ্যই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।
বেশি বেশি দোয়া-প্রার্থনা : রমজান আসার আগে থেকেই নিজেকে গুছিয়ে নিন। ধরে নেবেন, এটাই আপনার জীবনের শেষ রমজান। তাই আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ থাকবে, হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এই রমজানের ফজিলত হাসিলের তওফিক দাও। কারণ তোমার রহমত না থাকলে এই রমজান আমার জন্য কিছুই রেখে যেতে পারবে না। তাই তোমার করুণায় রহমত দিয়ে আমাকে ভরিয়ে দাও। বেশি বেশি নেক আমল করার সুযোগ দাও। আমার ইবাদতগুলো যেন এমন হয় যে ইবাদত হবে তোমারই দাসত্ব।
রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলো-
১. একনিষ্ঠভাবে তওবা করা
তওবা করা সব সময় ওয়াজিব। তবে ব্যক্তি যেহেতু এক মহান মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অনতিবিলম্বে নিজের মাঝে ও স্বীয় রবের মাঝে যে গুনাহগুলো রয়েছে এবং নিজের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে অধিকার ক্ষুণ্ণের যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো থেকে দ্রুত তওবা করে নেওয়া উচিত। যাতে করে সে পূত-পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এ মুবারক মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার। (সুরা আন-নুর, আয়াত : ৩১)
আল-আগার্ ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছ যে, নবী (সা.) বলেছেন- ‘হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহ্র কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭০২)
২. দোয়া করা
কিছু কিছু সালফে সালেহিন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন— যেন আল্লাহ তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন— যেন আল্লাহ তাদের আমলগুলো কবুল করে নেন। তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে— যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে ও উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে— আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরও দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন।
৩. এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে খুশি হওয়া
রমজান মাস পাওয়াটা একজন মুসলিমের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান কল্যাণের মৌসুম। যে সময় জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। রমজান হচ্ছে- কোরআনের মাস, সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য রচনাকারী জিহাদি অভিযানগুলোর মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, “বলুন, ‘এটি আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তার দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক ।এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৮)
৪. কোনো ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া:
আবু সালামাহ্ হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা (রা.)কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন- ‘আমার ওপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শাবান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।’ ( বুখারি, হাদিস : ১৮৪৯; মুসলিম, হাদিস : ১১৪৬)
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।” (ফাতহুল বারি : ৪/১৯১)
৫. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেওয়া এবং রমজানের ফজিলত অবগত হওয়া।
৬. যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।
৭. স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
৮. যে বইগুলো ঘরে পড়া যায় এমন কিছু বই সংগ্রহ করা অথবা মসজিদের ইমামকে হাদিয়া দেওয়া— যেন তিনি মানুষকে পড়ে শুনাতে পারেন।
৯. রমজানের রোজার প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
উসামাহ ইবনে যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন, ‘এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামিনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।” (নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের হেকমত (গুঢ় রহস্য) বর্ণনা করা হয়েছে। সে হেকমত হচ্ছে- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়। জনৈক আলেম আরও একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের তুল্য। এই্ সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরি করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।
১০. কোরআন তেলাওয়াত করা
সালামাহ ইবনে কুহাইল বলেছেন, ‘শাবান মাসকে তেলাওয়াতকারীদের মাস বলা হত।’ শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তার দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।
আবু বকর আল-বালখি বলেছেন, ‘রজব মাস হলো- বীজ বপনের মাস। শাবান মাস হলো-ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হলো- ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাসের উদাহরণ হলো- বাতাসের ন্যায়, শাবান মাসের উদাহরণ হলো- মেঘের মতো, রমজান মাসের উদাহরণ হলো বৃষ্টির মতো। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করল না, শাবান মাসে সেচ দিলো না, সে কীভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?’
আরও পড়ুনঃ বীর্য লেগে কম্বল-তোশক নাপাক হলে যেভাবে পবিত্র করবেন