জীবন কল্যাণময় ও বরকতময় হোক— এটা প্রতিটি সচেতন মানুষের কামনা থাকে। জীবনে বরকত লাভে ও কল্যাণ অর্জনে কিছু আমল করতে হয়। এতে ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি স্তরে বরকতের ফল্গুধারা বয়ে যায়।
মানুষ নিজের জীবনে কল্যাণ বা করকতের জন্য মেধা, শ্রম, সম্পদ সব কিছুই ব্যয় করে দেয়। কিন্তু প্রকৃত কল্যাণময় জীবন তারাই পায়, মহান আল্লাহ যাদের দান করেন। এখানে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো মানুষের জীবনকে কল্যাণময় করে—
ঈমান আনা ও বিশ্বাস করা
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের শুভ সংবাদ দিন যে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫)
তাকওয়া অবলম্বন করা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)
তাওয়াক্কুল করা
অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ভরসা করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি তাওয়াক্কুল করে মহান আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তাআলার ওপর নির্ভরশীল হতে, তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা
আনাস (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় রিজিক বৃদ্ধি ও দীর্ঘজীবী হতে চায় সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৩)
দান-সদকা করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
নিয়ামতের শুকরিয়া করা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদের আরো বেশি দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি তো কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
ইস্তেগফার করা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)
অল্পে তুষ্ট হওয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘ধনের আধিক্য হলে ধনী হয় না, অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪৬)
নিজের চেয়ে কম সম্পদশালীদের দেখা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিয়ো, তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষের দিকে নয়। এতে তোমাদের আল্লাহ তাআলার দেওয়া নিয়ামত নগণ্য মনে হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৩)
অন্যের জন্য দোয়া করা
আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে একজন ফেরেশতা তার জবাবে বলে, ‘আর তোমার জন্যও অনুরূপ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২০)
ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করা
আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, হে বৎস, তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাও, তখন সালাম দিয়ো। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৮)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে অফুরন্ত বরকত ও কল্যাণ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুনঃ খাদ্যসংকট দূর করতে নবীজি সাঃ যে নির্দেশনা দিয়েছেন
সূত্রঃ ঢাকাপোস্ট