প্রশ্ন একঃ রাতে স্বপ্নদোষের কারণে কিংবা শয্যাযাপনে বা সহবাসে অসতর্কতার কারণে বিছানার চাদর, কম্বল ও তোশক ইত্যাদিতে বীর্য লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নাপাকি দূর করার মাধ্যম ও পদ্ধতি কী হতে পারে? একটু জানালে ভালো হয়।
প্রশ্ন দুইঃ নাপাকি যদি উপরে উপরে থাকে তোষকের, আর ভেতরে যদি থাকে; তাহলে কিভাবে পরিষ্কার করবো? এতো বড় তোষক তো প্রায় প্রায় ধোয়া অনেক কঠিন কাজ।
প্রশ্ন তিনঃ কাঁথা-কম্বল ইত্যাদির কোনো এক কোণে যদি ছোট বাচ্চার পেশাব লাগে এবং তা শুকিয়ে যায় তাহলে কি অপর পাক অংশে নামায পড়া যাবে? তেমনি তোশক বা জাজিমের এক পিঠে নাপাকি লাগলে তা উল্টিয়ে অপর পিঠে কি নামায পড়া যাবে?
উত্তরঃ
উত্তর দেয়ার আগে একটি বিষয় জেনে নেই যে বীর্য নাপাক। পাক হবার প্রশ্নই উঠে না।বীর্য নাপাক বলেই শুকনা হলে খুটিয়ে তুলে ফেলা ও ভিজা হলে কাপড়টি ধৌত করার কথা হাদীসে এসেছে। যেমন-
عَمْرُو بْنُ مَيْمُونٍ، قَالَ: سَأَلْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ يَسَارٍ [ص:56] فِي الثَّوْبِ تُصِيبُهُ الجَنَابَةُ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ: «كُنْتُ أَغْسِلُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَأَثَرُ الغَسْلِ فِيهِ» بُقَعُ المَاءِ
অনুবাদ- আমার বিন মাইমুন রহঃ সুলাইমান বিন ইয়াসার রাঃ কে বীর্য লাগা কাপড়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন, “আমি রাসূল সাঃ এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম তারপর তিনি নামাযের জন্য বের হতেন এমতাবস্থায় যে,কাপড়ে পানির ছাপ লেগে থাকতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১, ২২৯}
কথিত আহলে হাদীসরা কোন প্রকার দলীল ছাড়াই বীর্যকে সর্বাবস্থায় পবিত্র বলে থাকে, তাদের আকাবীরদের অন্ধ তাকলীদ করে । খাওয়া-পান করা সবই মনে হচ্ছে জায়েজ তাদের কাছে?!
হাদীস দ্বারা প্রমানিত সত্য হলো বীর্য নাপাক।
অন্য হাদিসে এসেছে আম্মার বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত আছে।
يَا عَمَّارُ إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ: مِنَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَالْقَيْءِ وَالدَّمِ وَالْمَنِيِّ
রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা- ১. পায়খানা, ২. প্রশ্রাব, ৩. বমি, ৪. রক্ত, ৫. বীর্য। (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস: ৪৫৮)
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘বীর্য সিক্ত থাকলে— তা ধুয়ে ফেল, আর শুকিয়ে গেলে তা খুটিয়ে ফেল।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৯৩৩)
বীর্য শুকিয়ে যাওয়ার পর সেই বিছানা না ধুয়ে সেখানে ঘুমানো যাবে। সেই বিছানায় ঘুমালে কাপড় ও শরীর নাপাক হবে না। তবে পবিত্র বিছানায় ঘুমানো রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর আদর্শ।
এবার আসি কম্বল-তোশকে বীর্য লাগলে / প্রশ্রাব লাগলে পবিত্র করার উপায়।
শরীয়তের বিধান হলো চাদরে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রতিবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধৌত করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে, তাতে কোনো দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।
চাদরে যদি বীর্য লাগে এবং শুকিয়ে যায়, তাহলে আঁচড়ে তুলে ফেললে অথবা রগড়ে মর্দন করে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর যদি বীর্য শুকনো না হয়, তাহলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। প্রস্রাব করে পানি নেওয়ার পর যদি বীর্য বের হয়, তাহলে আবার ধুয়ে ফেলতে হবে।
★চামড়ার তৈরি চাদর বা এমন চাদর যেটা নিংড়ানো যায়না,বা সেটা ছিড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে, যদি সেই চাদর নাপাক হয়ে যায় আর নাপাকি যদি ঘন হয় যেমন—গোবর, পায়খানা, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি; তাহলে নাপাকি ঘষে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর নাপাকি যদি তরল হয় এবং শুকিয়ে গেলে দেখা না যায়, তাহলে না ধুলে পাক হবে না। তা ধুয়ে ফেলার নিময় হলো, প্রত্যেকবার ধৌত করার পর এতটা বিলম্ব করতে হবে যেন পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধৌত করতে হবে।
যদি তোষকে বীর্য লেগে যায় তাহলে ইসলামের বিধান হল, যদি তা শুধু উপরের আবরণে লেগে থাকে এবং ভিতরে প্রবেশ না করে, তাহলে তা ঘষে তুলে ফেললে বা অন্য কোনভাবে দূর করে দেয়া দ্বারা পাক হয়ে যাবে। অথবা তিন বার তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে দেয়ার দ্বারাও পাক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি তোশক নাপাকি ভেতরে খুব ভালোভাবে চুষে নেয়, তা হলে তা তিন বার ধৌত করতে হবে। এবং প্রতিবার ধৌত করার পর শুকাতে হবে। শুকানোর অর্থ হচ্ছে তার উপর হাত রাখলে যেন ভিজে না যায়। বা তার ওপর কিছু রাখলে তা ভিজবে না।
(শামি ১/৩৩২)
(তোষকের ভিতরে নাপাক গিয়েছে কিনা বুঝার জন্য কোনো উপায় না থাকলে গন্ধ শুকতে পারেন।)
যদি লেপ তোষকে পেশাব লাগে আর তা নিংড়ানো না যায় তবে তিনবার ভালোকরে পানি প্রবাহিত করে ধৌত করতে হবে। আর প্রত্যেকবার পানি প্রবাহিত করার পর এমনভাবে রেখে দিবে যাতে সমস্ত পানি ঝরে যায়। এভাবে মোট তিনবার পানি প্রবাহের দ্বারা ধৌত করলে তা পাক হয়ে হবে।
যে কম্বলে নাপাক লেগেছে, তাতে নামাজ আদায় যাবে?
কাঁথা-কম্বলের এক অংশ নাপাক হলে এর পাক অংশে নামাজ পড়া জায়েজ আছে। আর ভারী তোশক বা জাজিমের এক পিঠে নাপাকি লাগলে— তার অপর পিঠে যদি নাপাকির রং বা আর্দ্রতা প্রকাশ না পায় এবং গন্ধও পাওয়া না যায়— তাহলে পরিষ্কার পিঠে নামাজ পড়া যাবে। প্রকাশ থাকে যে— জাজিম ও তোশক ইত্যাদি যেগুলো ধোওয়া যায় না, সেগেুলোতে নাপাকি লেগে গেলে— নাপাকি শুকিয়ে যাওয়ার পর তার উপর জায়নামায বা কাপড় বিছিয়ে তা ব্যবহার করা যাবে এবং নামাজ পড়া যাবে ।
তথ্যসূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১, ২২৯, সুনানে দারা কুতনি, হাদিস: ৪৫৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৯৩৩, হালবাতুল মুজাল্লি : ১/৫৭১; আসসিআয়া : ২/৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৬২; রাদ্দুল মুহতার : ১/৪০২
আরো পড়ুনঃ এক রাকাতে পুরো কোরআন পড়ল সিরিয়ান যুবক