বৈশ্বিক মন্দার নেতিবচাক প্রভাব মোকাবিলার জন্য ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ-এর কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায়। কিন্তু আইএমএফ-এর বোর্ড অনুমোদন করেছে ৪৭০ কোটি ডলার, যা চাওয়ার চেয়ে ২০ কোটি ডলার বেশি।
বাংলাদেশ সময় পহেলা ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে আইএমএফ থেকে এ অর্থ ছাড় দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড় করেছে।
২রা ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ওই অর্থ যোগ হয়েছে। ফলে দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলারে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২১৯ কোটি ডলার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছেন, আমরাও দ্রুত ঋণ চেয়েছি। আইএমএফও দ্রুত ছাড় করে দিয়েছে। এই ঋণ পাওয়ার ফলে অন্যান্য সংস্থা থেকেও দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে। ফলে দেশে ডলারের জোগান বাড়বে, সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অফিসে এসেই বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর ওইদিনই সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দেনা-পাওনার লেনদেন সম্পন্ন করে রিজার্ভের সঙ্গে যোগ করেছেন। ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২১৯ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে। ফলে সংকটও কিছুটা কমবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয়া উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকা থেকে ঋণের অর্থও পাওয়া যাবে। আগামী এপ্রিলে এডিবির বোর্ড সভা হবে। ওই সভায় বাংলাদেশের অনুকূলে বড় অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে। তার আগেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক ও জাইকার ঋণও পাওয়া যাবে অচিরেই।
এক প্রতিক্রিয়ায় ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ প্রাপ্তির অনুমোদন বাংলাদেশের ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও পলিসি সংস্কারের শর্তারোপ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আর্থিক খাত, নীতি কাঠামো, জ্বালানি খাত, সরকারি অর্থব্যবস্থা, স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধি, জলবায়ু স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়াকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি। এই ঋণ সুবিধা বাংলাদেশকে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে বলেও উল্লেখ করেন মি. সামীর সাত্তার ।
আইএমএফ এর ঋণ বাংলাদেশের জন্য সস্তির হলেও ডলার সংকট এখনই কেটে যাবে এমনটা নয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তার মতে আইএমএফ যেসব সংস্কারের কথা বলেছে সেগুলোতে জোর দিতে হবে। সংস্কারমূলক কাজগুলো করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আরও শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে আমাদের যে বদনামটা আছে, যেমন খেলাপি ঋণ, ঋণে অনিয়ম-এগুলো কমাতে হলে কাঠামোগত সংস্কার আনতেই হবে। আর আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পেতে হলে তো এসব সংস্কারে হাত দিতেই হবে। তবে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে যে শর্ত দিয়েছে সেটি গণহারে না করার কথাও বলেন এই অর্থনিতীবিদ। তিনি বলেন কৃষি খাতে তো আমাদের ভর্তুকি রাখতেই হবে। সরকারও অবশ্য এ ব্যাপারে অনড় অবস্থানেই রয়েছে। এটাও একটা ভালো দিক বলে তিনি মনে করেন।
আইএমএফের দেয়া বেশকিছু শর্ত বাস্তবায়ন করেই এই ঋণ পেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে । এর মধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে । বিদ্যুতের দামও পাইকারি ও খুচরায় বাড়ানো হয়েছে দুই দফা। সারের দাম বাড়ানো হয়েছে এক দফা। বিদ্যুতের দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করার কথাও বলা হয়েছে।
বাকি ৪২২ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার ৬টি কিস্তিতে পাওয়া যাবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর কিস্তি ছাড় দিবে আইএমএফ। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে আসবে ঋণের সর্বশেষ কিস্তি।
তবে ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পেতে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে বাংলাদেশকে । প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগেই আইএমএফ শর্তের বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
আইএমএফের ঋণ অনুেমোদনের বিস্তারিত আর্টিকেল দেখে নিতে পারেন তাদের ওয়েবসাইট থেকে।