বিয়ে-শাদি মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা, নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। ইসলামে বিবাহ একটি ধর্মীয় কাজ। মানুষের পুতঃপবিত্র জীবন যাপনে বিবাহ অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়। মানব ইতিহাসের সভ্য সমাজে বিয়ে ও পরিবারের গুরুত্ব কখনো কমেনি; বরং আধুনিক সমাজে অধঃপতন থেকে বেছে থাকতে, পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জোর দাবি উঠেছে। সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বিয়ের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার গুরুত্ব অপরিসীম।
বস্তুত, জীবনে বিয়ে-শাদির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ তা’আলা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তার জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
পাত্রী নির্বাচনে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে বলেছেন নবীজি
ধরুন, এখন আপনার বিয়ের বয়স হয়েছে। আপনি বিয়ের কথা ভাবছেন। তাহলে জেনে রাখা জরুরি যে কেমন পাত্রী নির্বাচন করা উচিত। পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক মানদণ্ড হলো দুইটি : সৌন্দর্য ও দ্বীনদারি। অর্থাৎ কোনো নারীকে বিয়ের আগে ধর্তব্য হলো- তার সৌন্দর্য। এরপর তার দ্বীনদারি ও ধার্মিকতা।
সুতরাং যদি কোনও পাত্রী পছন্দ হয়, শরিয়তসম্মত পন্থায় বিয়ের জন্য অগ্রসর হতে চান তাহলে যদি দেখেন পাত্রীর দ্বীনদারি ঠিক আছে, তাহলে বিয়ে করুন। অন্যথায় বর্জন করুন। অর্থাৎ বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচন ও প্রত্যাখ্যান হয় যেন দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ যদি কোনও নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয়, তাহলে তার দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি প্রশংসিত হয়, তাহলে বিয়ে করবে; অন্যথায় দ্বীনের কারণে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয় যে— প্রথমেই দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আর এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে; এরপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসনীয় না হলে— ফিরিয়ে দেবে। তাহলে এ প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে; দ্বীনের কারণে নয়।’ (শরহু মুনতাহাল ইরাদাত, লিল-ইমাম বুতি : ২/৬২১)
সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন নবীজি
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, তখন সম্ভব হলে— তার এমন কিছু যেন দেখে নেয়, যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।’
বর্ণনাকারী বলেন, আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি— যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করল। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮২)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়, কোনো নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং সে তার নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যেটা অপছন্দ করে— তার বিপরীত কিছু করে না।’ (মুসনাদে আহমদ, সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা; হাদিস : ১৮৩৮)
সৌন্দর্যের বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রসঙ্গত, বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টি আপেক্ষিক। কারণ, সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারও কাছে ফর্সা ভালো লাগে, আবার কারও কাছে ভালো লাগে মৃদু শ্যামলা।
সুতরাং বিয়ের আগে এ বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা। চরিত্রের সুরক্ষা ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আপনি যদি এমন নারীকে বিয়ে করেন, যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় কিংবা ভালো লাগে, তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি আসবে। পাশাপাশি পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে। (তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- তাকওয়া বা আল্লাহভীতি)। কারণ, এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্যজীবনে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়।
দ্বীনদারির ক্ষেত্র যেমন হওয়া চাই
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।
পাত্র নির্বাচনে কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে?
অথচ আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বেই ইসলাম পাত্রের জন্য পাত্রী নির্বাচনে যেমন নির্দেশনা প্রদান করেছেন ঠিক তেমনি পাত্রীর জন্য পাত্র নির্বাচনেরও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বর নির্বাচনের নারী যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিবে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য স্বামী নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করে বলেন, ‘যখন তোমাদের নিকট এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়, যার চরিত্র ও দ্বীনদারিতে তোমরা (পাত্রী) সন্তুষ্ট হবে। তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যদি তোমরা তা না কর, তবে তা পৃথিবীর মধ্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হবে। (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
বিশেষ করে যোগ্য স্বামীর মানদণ্ড তিনটি-
>> দ্বীনদারি;
>> চরিত্রবান ও
>> আকলসম্পন্ন;
বিশেষ করে চরিত্রবান, সভ্য-শিষ্টাচারসম্পন্ন ও সঠিক আকিদা-বিশ্বাসের কোনো যুবক পেলে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেননা, তার মধ্যেই প্রকৃত দ্বীন পাওয়া যাবে। কিন্তু যদি কোনো মেয়ের বিয়ে বিলম্ব হয়ে যাওয়ার কারণে ঈমানের কমতি ও চারিত্রিক স্খলনের আশঙ্কা করে এবং উত্তম দ্বীনদার পাত্র পাওয়া না যায়; তাহলে তুলনামূলক যাকে ভালো পাওয়া যায়, তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আল্লাহ সাহায্যকারী।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষ-নারীকে তার পছন্দ মতো মানুষকে বিয়ে করার তাওফিক দিন। সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্যজীবন গড়ার মাধ্যমে জেনা-ব্যভিচার মুক্ত সমাজ গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুনঃ যেমন মেয়ে বিয়ে করতে বলেছেন রাসূল সাঃ