ধর্ম নিরপেক্ষতার তকমাধারি ভারত সাম্প্রদায়িকতার চুড়ান্ত প্রদর্শনি দেখিয়ে বহু আগ থেকেই মুসলিম বিদ্বেষী আচরণ করে আসছে। মুসলমানদের হত্যা নির্জাতন জেল জুলম তাদের ঘরবাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করা আর সর্বোপরি মুসলমানদেরকে ভারত থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ গুলো বেশ পুরনো। সাম্প্রতিককালে দেশটিতে হিন্দুত্ববাদি মোদি সরকার কর্তৃক অব্যাহত মসজিদ মাদ্রাসা ভাংচুরের ঘটনা যেন মুসলমানদের বুকে জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
’সম্প্রতি আমরা নিজের দেশেই অদৃশ্য’: মোদির ভারতে মুসলিম অভিজ্ঞতা শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলা। প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা উল্লেখ করেছে ২০১৪ সালে ভারতে হিন্দু জাতিয়তাবাদি দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানদের জীবনযাপন অশান্ত হয়ে পড়েছে এমন অবস্থায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির সংখ্যালোগু মুসলিম সম্প্রদায়। নিজেদের ইজ্জত আবরু আর জানমাল রক্ষার মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যখন বারবার সামনে চলে আসে তখন বুকের ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলে উঠে এক মহা ধর্মযুদ্ধে রুপ নিবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এই অবশ্যম্ভাবি যুদ্ধের কথা মহানবি হযরত মুহাম্মদ সা: বলে গেছেন ১৪শ বছর আগেই। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী যেই যুদ্ধের নাম গাজওয়াতুল হিন্দ। অন্যদিকে পানি নিয়ে বাংলাদেশ-পকিস্তানের সাথে দীর্ঘ্দিনের বিরোধ আর কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সেই সাথে সেভেন সিস্টার্সের স্বাধীনতার দাবি নি:সন্দেহে ভারত ভিবক্তি এবং শিগগিরই এক মহাযুদ্ধের ইঙ্গিত বহন করছে।
হাদীসের ভাষা থেকে জানা যায় গাজওয়াতুল হিন্দ হবে মুর্তিপুজারিদের সঙ্গে মুসলমানদের পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হিন্দুস্থানের মোট মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশই শহীদ হবে, আরেক অংশ পালিয়ে যাবে আর শেষ অংশ জিহাদ চালিয়ে যাবে এবং চুড়ান্ত বিজয় লাভ করবে। এই যুদ্ধে হযরত আবু বকর রা: নিজের সব সহায় সম্পত্বি বিক্রি করে দিয়ে অংশ গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এই যুদ্ধের শহীদদেরকে শ্রেষ্ঠ শহীদ হিসেবে সম্মাননা দেয়ার কথা বলেছেন রাসূল সাঃ।
“আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা: আমাদের সাথে হিন্দুস্থানের যুদ্ধের ওয়াদা করেছেন। আবু হুরায়রা রা: বলেন আমি সে যুদ্ধ পেলে আমার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করব। আর আমি মারা গেলে শহীদদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি হবো এবং ফিরে এলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা হবো। (নাসাঈ 3174)
হজরত কা’ব রহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শামের একজন বাদশাহ হিন্দুস্থানের দিকে একটি সৈন্যদল পাঠাবেন। সৈন্যদল হিন্দুস্থানের ভূমি জয় করে এর অর্থ ভান্ডার দখল করবে। তারপর বাদশাহ এসব ধনদৌলত বাইতুল মুকাদ্দাসে সাজিয়ে রাখবেন। সৈন্যদলটি হিন্দুস্থানের রাজাকে শিকলবন্দি করে তাঁর নিকট উপস্থিত করবে। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সকল এলাকায় তাঁর বিজয় অর্জন হবে। দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত তাঁরা ন্দিুস্থানেই অবস্থান করবেন।
অন্য একটি হাদীসে শামের কোন দেশের শাসক হিন্দুস্থান জয় করবে সেব্যপারে আরও পরিস্কার ধারনা দেওয়া হয়েছে। হজরত আরতাত রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে খলিফার ইয়ামানি নেতৃত্বে ইস্তামবুল ও রোম বিজয় হবে, তাঁর সময়েই দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে, তাঁর যুগেই ইসা ইবনে মারইয়াম আ. অবতরণ করবেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই হিন্দুস্থানের যুদ্ধ সংঘিটিত হবে।
গাজওয়াতুল হিন্দ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট
সেগুলো হলো
১. এই যুদ্ধ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. কর্তৃক প্রতিশ্রুত একটি যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বানী, যা অবশ্যই ঘটবে।
২. যুদ্ধটি হবে হিন্দুস্থানে, যা দ্বারা পুরো পাক-ভারত উপমহাদেশকে বুঝানো হয়েছে
৩. যুদ্ধটি হবে হিন্দুস্থানে মুশরিক তথা মূর্তিপূজারী হিন্দুদের সাথে
৪. এ যুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে নিজের জান-মাল সব কিছু ব্যয় করে অংশগ্রহন করা উচিত
৫. এ যুদ্ধে মুসলমানদের অবশ্যই বিজয় অর্জন হবে।
প্রিয় দর্শক আমরা জানলাম গাজওয়াতুল হিন্দ কোথায় হবে, কার সাথে হবে, কীভাবে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হাদীসে বর্ণীত এই মহাযুদ্ধ কবে হবে? এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও সঠিক বক্তব্য হচ্ছে যেহেতু গাজওয়াতুল হিন্দের সঙ্গে ইমাম মাহাদি ও হযরত ঈসা: এর সম্পর্ক রয়েছে যা এখনও ঘটেনি সেহেতু গাজওয়াতুল হিন্দ কেয়ামতের নিকট সময়েই হবে এমনটাই মত হাদীস বিশারদদের।
ইসলামিক চিন্তাবিদরা মনে করেন আখেরি জামানায় ইহুদিদের ত্রাতা হয়ে দাজ্জালের আগমন এবং তাকে হত্যার জন্য হযরত ঈসা আ: এর আবির্ভাব এবং তাঁকে সাহাজ্য করার জন্য ইমাম মাহাদি আ: এর আগমন এবং গাজওয়াতুল হিন্দে নেতৃত্ব দান এসবগুলোই একই সুতোয় গাঁথা একটি মালা যার নাম কেয়ামতের আলামত যা ঘটলেই আল্লাহর হুকুমে সিংগায় ফু দিবেন হযরত ইস্রাফিল আ: যার সাথে সাথেই হবে কেয়ামত, ঘটবে প্রলয় থেমে যাবে এই মহাবিশ্বের সকল কর্মযজ্ঞ।েআরও পড়ুন: খাদ্যসংকট দূর করতে নবীজি সাঃ যে নির্দেশনা দিয়েছেন