২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার তীব্র আন্দোলনে ১৬ বছরের স্বৈরাচারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। আলোচনার কেন্দবৃন্দু কখনও সংস্কার, কখনও জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচন । তবে এবার হঠাৎ করেই আলোচনায় গণপরিষদ।
এর আগেও গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ কথা বলেছেন। তবে সেটা রাজনীতিতে সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। তবে এখন বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিনে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছে।অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য দিয়েছে।
এই গণপরিষদ নির্বাচন নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য প্রয়োজন এরকম কথা বলা হচ্ছে এনসিপির পক্ষ থেকে।
যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়, তখন আন্দোলনে থাকা সবগুলো দলের মধ্যে একধরনের ঐক্য স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এরপর সময় যত গড়িয়েছে, দলগুলোও তাদের নিজস্ব রাজনীতি আর কৌশল নিয়ে হাজির হয়েছে।
বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন চাইছে, তবে তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার কথা বলছে। যদিও যৌক্তিক সময়েও কোন সীমা তারা দেয়নি। অন্যান্য দলগুলোও কমবেশি এর মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছে।
তবে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, গণপরিষদ নির্বাচনের কথা। যেটাকে বিএনপি দেখছে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে। দলটির স্থীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকায় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণপরিষদের দাবির সমালোচনা করেন।
তিনি বলেছেন, যারা গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আনছে, হয় তারা বোঝে না অথবা বুঝেও আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।
কিন্তু গণপরিষদ নির্বাচন হলে কি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছাতে হবে? এমন প্রশ্ন যখন উঠছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে তখন নির্বাচন কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে।
বিএনপি ইতোমধ্যেই সেকেন্ড রিপাবলিক, নতুন সংবিধান কিংবা গণপরিষদের দাবির বিরোধিতা করেছে। দলটি মনে করছে, এর ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে।
সম্প্রতি বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যে কেউ যে কোনো কথা বলতেই পারে। কিন্তু সেটা পূরণের জন্য অবশ্যই জনগনের ম্যান্ডেট লাগবে।
তিনি বলছেন, এখানে ইলেকশন পেছানোর তো কোনো সুযোগ নাই। অলরেডি ডিসেম্বর ইজ টু লেইট।
এদিকে এনসিপি দাবি করছে নির্বাচন পেছানোর কোন ইচ্ছা নেই তাদের।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রথমে যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়, সেটা ছিলো সংস্কারকে ঘিরে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে -এমন প্রশ্নের মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে বিএনপি।
সরকার অবশ্য ইতোমধ্যেই আগামী ডিসেম্বরকে ধরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার কথা জানিয়েছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপদেষ্টাদের কথায় স্থিতি নেই। প্রায় প্রতিদিনই আসছে ভিন্ন ভিন্ন কথা।
এরমধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিকে ঘিরে রাজনীতিতে আবারও আলোচনা। কিন্তু গণপরিষদ নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে নতুন সংবিধান তৈরির মতো সময়সাপেক্ষ দাবি তুলে ধরে ছাত্রদের দল এনসিপি কি আসলে নির্বাচন পেছাতে চায়? এমন প্রশ্নে এনসিপির জ্যেষ্ঠ্য যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব অবশ্য তা নাকচ করে দিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন পেছানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু এরপরও যে নির্বাচন পেছানো নিয়ে সংশয়-সন্দেহ, তার কারণ রাজনীতিতে শুধু জাতীয় নির্বাচন নয় বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও জোরালো আলোচনা দেখা যাচ্ছে। যেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি তো বটেই এমনকি জামায়াতের পক্ষ থেকেও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে।
তবে বিএনপি এর বিপক্ষে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই স্থানীয় নির্বাচন করে ফেলা ভালো- এমন ধারণাও নাকচ করছেন বিএনপি নেতারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটিও চায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ্য যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব বলেন, যদি সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব নাও হয়, তাহলে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সংখ্যক জেলা-উপজেলায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে পারে। এটা দরকার। কারণ প্রশাসনের প্রস্তুতি এবং সক্ষমতাও তখন আমরা যাচাই করতে পারবো।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, যদি আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেতে চাই, তাহলে সরকারের প্রস্তুতিটাও লাগবে। একইসঙ্গে লাগবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সবকিছু মিলে যদি বিষয়টি একবিন্দুতে আসে, তখনই কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে।
কমিশনার আনোয়ারুল বলেন আপাতত আমাদের টার্গেট জাতীয় নির্বাচন।