প্রত্যাশামাফিক পারফর্ম করতে না পারা, মিস ফিল্ডিং, স্লো স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনার তোপের মুখে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বিশ্বকাপ ২০২৩ এ দলে তার থাকার কথাই ছিল না! তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে ভারতের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের।
কয়েক মাস ধরেই ‘বিশ্রামে’ রাখা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। তুমুল আলোচনা সমালোচনার মধ্যে বিশ্বকাপ খেলতে এসে শেষটা রাঙিয়ে গেলেন সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বাংলাদেশ দলের ব্যার্থতার মাঝে সেই বাদ পড়া রিয়াদই এবারের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন। ৮ ম্যাচে করেছেন সবার চেয়ে বেশি রান।
মাঝে কোথাও ছিলেন না ৩৭ বছর বয়সি ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের সিরিজ এবং এশিয়া কাপে দলের বাইরে ছিলেন।
কি করেই বা থাকবেন? তিনিতো হিসেবের মধ্যেই ছিলেন না। বিসিবি, টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ ও নির্বাচক- কারো বিশ্বকাপ চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য ও পরিকল্পনার মধ্যেই ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তাকে বাইরে রেখেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড সাজানোর চিন্তা ভাবনা ছিল প্রায় চূড়ান্ত। ভাবা হয়েছিল রিয়াদের বয়স হয়েছে, ফিটনেসে ঘাটতি। ক্ষিপ্রতা নেই, চপলতা কমে গেছে, চোখে ভালো দেখতে পান না। ব্যাটের জোরও নিশ্চয়ই কমেছে। হয়তো তরুণদের সঙ্গে দৌড়াতে পারবেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ!
তাই রিয়াদকে রেখে মিডল অর্ডারের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়েছিল আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং শামীম পাটোয়ারীকে; কিন্তু তারা ক্রমাগত ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অনেকটা বাধ্য হয়েই রিয়াদকে ১৫ জনের বিশ্বকাপ দলে নেন নান্নু বাশার হাতুরুরা।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাকে মানদণ্ড ধরলে বিশ্বকাপের মতো বিশাল মঞ্চে ওঠার আগে সেভাবে প্রস্তুতও ছিলেন না তিনি।
বোঝাই যাচ্ছিল, হেডকোচ ও নির্বাচকদের সুনজরে ছিলেন না। আর বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে রীতিমত বিমাতাসুলভ আচরণেরও শিকার হন। প্রথম ম্যাচে একাদশে জায়গা পেলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে বাদ দেওয়া হয়। অবশেষে ব্যাট করার সুযোগ পান তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। চেন্নাইয়ের ওই ম্যাচে রিয়াদকে খেলানো হয় ৮ নম্বর ব্যাটার হিসেবে।
অথচ, এত নিচে নেমেও রান করার তীব্র আকাঙ্খা ফুটে ওঠে তার ব্যাটে। কিউই বোলারদের বিপক্ষে ৮ নম্বরে নেমেও রান করার অদম্য স্পৃহা বুকে ৪৯ বলে ৪১ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দেখিয়ে দেন, জানিয়ে দেন এবং বুঝিয়ে দেন- যেখানেই খেলানো হোক না কেন, আমার রান ক্ষুধা আছে। আমি রান করতে চাই। নিজেকে মেলে ধরতেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমি।
এ কারণে আট নম্বরে নেমে বোলারদের সঙ্গে নিয়েও রান করে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭ নম্বর থেকে ৬-এ প্রমোশন পান। এরপর ভারতের শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে সমান তিনটি করে ছক্কা ও বাউন্ডারিতে ৩৬ বলে ৪৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১১ বলে ৪ ছক্কা ও ১১ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১১১, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭০ বলে ৫৬, শ্রীলংকার সঙ্গে ২২ আর সর্বশেষ শনিবার পুনেতে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২৮ বলে তিন ছক্কায় ৩২ রানের এক আক্রমণাত্মক ইনিংস উপহার দেন রিয়াদ।
সবচেয়ে বড় কথা, যেদিন যেখানে তাকে খেলানো হয়, প্রতিটি পজিসনে ভালো খেলে রান করেন রিয়াদ। এর মধ্যে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৬ নম্বরে নেমে শতরান করে রীতিমত সবাইকে লজ্জায় ফেলে দেন।
শেষ পর্যন্ত সবাইকে ভুল প্রমাণ করে বর্ষীয়ান রিয়াদই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে টপ স্কোরারও হয়েছেন। তার ব্যাট থেকে ৮ ম্যাচের ৭ ইনিংসে একটি শতক ও অর্ধশতকসহ এসেছে মোট ৩২৮ রান।
শুধু রান করায়ই নয়, ব্যাটিং গড় ও ছক্কা হাঁকানোর বেলায়ও ব্যাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবার ওপরে রিয়াদ।
আগের বিশ্বকাপে ৬০৬ রান করা সাকিব আল হাসান এবার সুপার ফ্লপ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ক্রমাগত ব্যার্থতার মাঝেও রিয়াদ ছিলেন উজ্জল।