একসময় ঢাকা থেকে করাচি যাওয়ার জন্য পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় সেই রুট। এরপর সময় পেরিয়েছে, বদলেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর এখন প্রায় সাত বছর পর আবারও চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট!
তবে এবার এই ফ্লাইটের পথ আগের মতো নয় কারন মাঝখানে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক বাঁধা ভারতের আকাশপথ।
ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করবে ঢাকা-করাচির ফ্লাইট?
পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহ এই রুটে ফ্লাইট চালানোর অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে এয়ার লাইন্সের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই যাত্রা শুরু করবে ফ্লাইট।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ফ্লাইট কি ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে?
ঢাকা থেকে করাচির আকাশপথ প্রায় ২৩৭০ কিলোমিটার। যদি বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটটি সরাসরি পাকিস্তান যেতে পারে তাহলে ভ্রমণের সাথে সাথে খরচও কমবে।
বর্তমান সময়ে ঢাকা থেকে করাচি যেতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ট্রানজিট নিতে হয়, এতে সময় লাগে ৮-১২ ঘন্টা, আর খরচও লাখ টাকার বেশি। ভারতের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি পেলে ঢাকা থেকে করাচি যেতে সময় লাগবে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘন্টা আর খরচও কমবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভরত কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে তার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেবে?
ভারত পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় কাশ্মীর ইস্যু থেকে শুরু করে নানা কারনে ভারত তার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। বিশেষত, ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বিশেষ অনুমতি ছাড়া ভারতের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
২০২২ সালে ভারত নিজেও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল যাতে দিল্লি থেকে কাবুল বা মধ্যপ্রাচ্ছে সরাসরি ভারতীয় ফ্লাইট উড়তে পারে ফলে এখানে দ্বীপাক্ষিক সমঝোতার জায়গা থাকতেই পারে।
এখন বড় প্রশ্ন বাংলাদেশের ফ্লাইট হলেও, পাকিস্তানের গন্তব্য হওয়ায় ভারত কি তার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেবে?
২০২৪ সালে দিল্লির বন্ধু আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে বাণিজ্যিক সংযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের জন্য ভিসা ফি বাতিল করেছে সেই সাথে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিদা দিচ্ছে। করাচি-চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলও শুরু হয়েছে।
কিন্তু ভারত কি এই সম্পর্ক ইতিবাচকভাবে দেখছে?
ভারত যদি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বিমান চলাচলে তাদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি না দেয় তাহলে ঢাকা-করাচি ফ্লাইটকে বিকল্প হিসেবে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের রুট ব্যবহার করতে হবে যা ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট শুধুমাত্র একটি এয়ার লাইন্সের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার কুটনৈতিক সমীকরনের একটি নতুন অধ্যায়। দিল্লি যদি পাকিস্তানকে তাদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে এটি হবে একটি কৌশলগত পরিবর্তন যা দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও ভ্রমণ সংযোগকে এক নতুন মাত্রা দিতে পারে। এখন সবকিছুই নির্ভর করছে ভারতের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর।
দক্ষিণ এশিয়ার আকাশপথে নতুন দিগন্ত খুলবে নাকি পুরনো দন্ধই পথ রুদ্ধ করবে? সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে আর কিছুদিন পর্ই।