দিল্লি না ঢাকা? এই স্লোগান এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়! বরং এটি এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্সের বেঁচে থাকার মন্ত্র! একসময় ভারত বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই আদিপত্য বিস্তার করার চেস্টা করত। ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে বাংলাদেশকে করেছিলো হাতের পুতুল!
তবে সময় বদলেছে, বদলে গেছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকালে কার্যত ঢাকা ছিলো দিল্লির হাতের পুতুল, কিন্তু নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর সেই প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। বাংলাদেশ এখন আর দিল্লির উপর নির্ভরশীল নয় বরং ভারতের অবহেলিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিজেদের বাঁচাতে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে!
ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার বছরের পর বছর তাদের শোষণ করছে, বিনিয়োগ না করে শুধু কর আদায় করছে। এই অঞ্চলগুলো আসামের গুয়াহাটি বা ত্রিপুরার আগরতলার মতো শহর ছাড়া অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ফলে তারা ক্রমেই দিল্লির প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রকে পাত্তা না দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে হাত পেতেছে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, তারা বাংলাদেশর ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য ‘হিলি-মহেন্দ্রগঞ্জ অর্থনৈতিক করিডোর’ গড়তে চায়।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ করা হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য এটি হবে গেম চেঞ্জার।
কুটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন শুধু মেঘালয় নয় বরং ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সব রাজ্যই দিল্লির শোসন থেকে স্বাধীন হতে চায়। তাই বর্তমান স্বাধীন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তাদের আস্থার জায়গা।
বর্তমানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের সংযোগ পশ্চিমবঙ্গের সরু ‘চিকেন নেক করিডোর’-এর মাধ্যমে। এই পথ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল। কলকাতা থেকে ত্রিপুরা, মেঘালয় বা আসামে যেতে হলে ১২০০ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।
কিন্তু যদি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে একটি সংযোগ গড়ে তোলা যায়, তাহলে এই দূরত্ব ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে পরিবহন ব্যয় ও সময় দুটোই কমে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কী ভারতকে করিডোর দিচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের পক্ষে কথা বলেছেন, যা ভারতীয় রাজ্যগুলোর জন্য আশার বার্তা হতে পারে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি বলেন,
“বাংলাদেশের ভূগোল আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমরা সমুদ্রবন্দর ও হিমালয়ের মধ্যবর্তী অবস্থানে থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলতে পারি। এই সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সুস্পষ্ট: বাংলাদেশ এখন নিজের কৌশলগত গুরুত্ব কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে। আর ভারত যদি বাংলাদেশের করিডোর পেতে চায়, তবে দিল্লিকে অবশ্যেই বাংলাদেশের শর্ত মেনে নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের সরকার এখন আর ভারতের নাচের পুতুল নয়।