ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় পরম বন্ধু ছিলো প্রয়াত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালে অনেক নাটকের পর এরশাদ যোগ দিয়েছিলো শেখ হাসিনার মহাজোটে। কিন্তু ২০১৪ সালে হাসিনার সাথে বেকে বসেন এরশাদ। কিন্তু সেবার হাসিনার পরম বন্ধু হিসেবে সামনে আসেন রওশন এরশাদ। ‘পুরস্কার’ হিসেবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ পেয়েছিলেন তিনি। তবে ২০২৪ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয় ঐক্যমতে জাতীয় পার্টি উপেক্ষিত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শুরুতে এক রকমের ফুরফুরে মেজাজে ছিল ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটসঙ্গী স্বৈরাচার এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে সেই পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগেনি। আর বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি নতুন রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গঠিত রাজনৈতিক দলটি এখন রাজনীতিতে একঘরে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৩১ আগস্ট বৈঠকের ডাক পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারা। মূলত তাদের বিরোধিতার মুখে পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের আর কোনো বৈঠকে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি।
গত নভেম্বর মাসে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে কয়েকটি কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। তারপর থেকে দলটির কার্যক্রম বিবৃতিনির্ভর এবং চার দেওয়ালে বন্দী হয়ে আছে।
সর্বশেষ ১৫ ফেব্রুয়ারী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমতের বৈঠক করলেও ডাক পায়নি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর জাতীয় পার্টি।
বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ যে সরকার গঠন করেছিল, সেই সরকারের অংশ ছিল জাতীয় পার্টি— এমন অভিযোগ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিরও অংশ ছিল।”
৫ আগস্টের পর জাতীয় পার্টির রাজনীতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দলটির কার্যক্রম এখন অনেকটা বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে আছে। সেখানে থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে গণমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। নিজের স্ত্রীকে এমপি বানানোর শর্তে জি এম কাদের সর্বশেষ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও সেবার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহন নিয়ে তৃণমূলে ব্যপক মতবিরোধ ছিলো।
কিন্তু তৃণমুলের বিরোধিতা সত্বেও শুধুমাত্র নিজে বিরোধী দলীয় নেতা হতে কখনও এরশাদ, কখনও রওশন এরশাদ আবার কখনও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দাসত্বের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।