বরকত শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত। বরকত বলা হয় আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অল্পতে অধিক হওয়া। ঘরে-বাইরে, কাজেকর্মে এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সব মুসলীমের কামনা থাকে এই বরকত।
আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য বরকত লাভের দোয়া করেছেন, পাশাপাশি উম্মতকেও প্রতিটি কাজে বরকত লাভের বিভিন্ন উপায় শিখিয়েছেন।
দৈনন্দিন অন্য সব কাজের মতো খাবারেও বরকতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে অল্পতেই স্বস্তি আসে, তৃপ্তি লাভ করা যায়। খাবার গ্রহণের সময় বরকত লাভের বিশেষ উপায়ের কথা জানিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একসঙ্গে খাবার খাওয়াকে তিনি বরকত লাভের অন্যতম উপায় বলেছেন।
হাদীসে বর্ণিত আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর মিলেমিশে একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করো এবং আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করো। কেননা, এতে তোমাদের জন্য বরকত-কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২৪৪, মেশকাত, হাদিস, ৩৭০)
সাহাবি হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুলগুলো এবং খাবারের পাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমরা জান না যে, কোন আঙ্গুল বা কোন লোকমায় বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম, হাদিস, ২/ ১৭৫, মেশকাত, হাদিস, ৩৬৩)।
এছাড়াও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারও লোকমা পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে নিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়। লোকমাটিকে যেন শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস, ৫৪২১ ও ৫৪২৬)
মহানবী (সা.) যেভাবে খাবার খেতেন
খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা : রাসুল (সা.) খাওয়ার প্রারম্ভে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করতেন। এবং সাহাবিদেরকে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে উৎসাহ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩)
আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ।’ (রিয়াজুস সলেহিন : ৭২৯)
ডান হাত দ্বারা খাবার খাওয়া : রাসুল (সা.) সারাজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দ্বারা খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাঁ হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান কোরো না। কেননা শয়তান বাঁ হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)।
আঙুল চেটে খাওয়া : আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকতলাভের বেশি সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯১৪)
হেলান দিয়ে না খাওয়া : কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাওয়া নিষিদ্ধ। হেলান দিয়ে খাওয়ার ফলে পেট বড় হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এটি দাম্ভিকতার আলামত।
আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৬)
খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা : রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁ না দেওয়া : খাবারের মধ্যে ফুঁ দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। ফুঁ দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৩)
খাবারের শেষে দোয়া পড়া : খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দায়িন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৮৪)
আরও পড়ুনঃ পানের সাথে জর্দা খাওয়া কি হারাম?