বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণে অবশেষে স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে সিরিয়া অবসান ঘটেছে আসাদের। দুই যুগের স্বৈরশাসনের। আর এরপর থেকেই নতুন করে আলোচনা এসেছে পবিত্র এই ভূমিটি। ইসলামের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস এমনকি কেয়ামতের কিছু আলামত ঘটবে এই ভূমিতে। একই সাথে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে এই ভূমিতে। তবে কতটা প্রস্তুত সিরিয়া।
বর্তমান সিরিয়া, লিবিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান সবই এই শাম ভূমির অন্তর্ভূক্ত । রাসূল (সাঃ) শামকে মুসলিমদের দ্বিতীয় হিজরতের ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এখানে ইমাম মাহাদির হাতে বায়আত, ঈসা আ.-এর আগমন, দাজ্জালের হত্যাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন রাসুলুল্লাহ সা.।
সামভূমি হবে কেয়ামতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কেন্দ্রস্থল। কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে অভিশপ্ত দাজ্জাল মানুষের ঈমান হরণ এবং ত্রাস ও মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করবে। সে সময় আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা ইবনে মারইয়ামকে দুনিয়াতে প্রেরণ করবেন।
দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাজত করতে তিনি দুজন ফেরেশতার ডানায় ভর করে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পূর্ব দিকে সাদা মিনারার নিকটে অবতরণ করবেন।কোরআন এবং বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় ইমাম মাহাদী এবং দাজ্জালের আসার পর ঈসা (আঃ) আগমন হবে মুসলিমদের একটা বড় অংশ।
দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে মুসলিমরা। দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটা কোন ঠাসা হয়ে যাবেন। তখন ইমাম মাহাদী এবং তার সৈন্যরা দামেস্কের ভেতরে অবস্থান করবেন। তখন দামিস্কের বাহিরে দাজ্জাল ও তার সেনারা সম্পূর্ণ ঘিরে রাখবে। তাতেই ইমাম মাহদী সিদ্ধান্ত নেবেন যে এভাবে বসে থাকবেন না।
মুসলিমরা সরাসরি দাজ্জালের সাথে মোকাবেলা করবে এবং তখন দামেস্কের দরজা খুলে দেওয়া হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন পরদিন ফজরের নামাজের সময় ইমাম মাহাদীর পেছনে মুসলিমরা দাঁড়াবেন।
এরপর হঠাৎ অন্ধকারে চারদিক ঢেকে যাবে। এতটাই অন্ধকার হয়ে যাবে যে একজন মানুষ তার হাতটাও দেখতে পারবে না।
এ সময় দামেস্কের সাদা মিনানের পাশে দুজন ফেরেশতার কাঁধে ভর করে নেমে আসবেন ঈসা (আঃ)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন কেমন হবে সেই দিনটি যেদিন তোমাদের মাঝে ইমাম মাহদী এবং ঈসা আলাইহিস সালাম দুজনেই থাকবেন।
কেউ হয়তো বলে দেবে না কিন্তু সবাই বুঝে যাবেন যে ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। তিনি মুসলিমদের চোখের পানি মুছে দিবেন। তাদের জান্নাতের সুখবর দিবেন।
তখন ইমাম মাহাদী সরে গিয়ে ঈসা (আঃ) জায়গা দিবেন। এবং নামাজের ইমামতি করার সুযোগ করে দিবেন।
কিন্তু ঈসা (আঃ) বলবেন ইকামত আপনার জন্য দেয়া হয়েছে আপনি নামাজের নেতৃত্ব দিন। আমি এসেছি অন্য উদ্দেশ্যে। এই বলে ঈসা (আঃ) ইমাম মাহাদীর পেছনে দাঁড়িয়ে ফজরের নামাজ আদায় করবেন।
অর্থাৎ আল্লাহর একজন নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন।
এখানে বোঝা যায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতদের সম্মানিত করা হয়েছে।
নামাজ শেষে ঈসা (আঃ) বলবেন দামিস্কের দরজা খুলে দিতে। দাজ্জাল যখন ঈসা (আঃ) কে দেখবেন তখন দাজ্জাল গলে যেতে থাকবেন। যেমনটা পানির মধ্যে লবণ গলে যায়।
ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে ধাওয়া করবেন। এবং বাবে লুত নামের জায়গায় তাকে হত্যা করবেন। তখন ঈসা (আঃ) দাজ্জালের অনুসারীদের বলবেন এই যদি তোমাদের খোদা হয় তাহলে আমি তাকে কিভাবে হত্যা করলাম।
এরপর ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে ৪০ বছর অবস্থান করবেন। এ সময় তিনি শান্তি ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবেন।
এছাড়া তখন পৃথিবীতে থাকাকালীন সমস্ত মিথ্যা ধর্মের অবসান ঘটবে। এবং সত্য ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে। তার শাসন আমলে পৃথিবীতে শান্তি স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। অনেক আলেমদের মতে সিরিয়ার সাদা মিনারের মসজিদটি হলো উমাইয়াত মসজিদ। কারন সেখানেই আছে সাদা মিনার। রাসূল সাঃ যখন হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তখন সিরিয়ায় কোন সাদা মিনার ছিল না।
গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার মুক্তিকামি জনতা দামেস্ক দখল করে মসজিদের ভিতরে উল্লাস করেছেন, এবং নামাজ আদায় করেছেন আর এই উল্লাসের দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত তারা দামেস্ক থেকে স্বৈরাচার আসাদের পতন ঘটিয়েছেন এবং দ্বিতীয়তঃ তারা প্রস্তুত (আঃ) এর আগমনের জন্য।