২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনার একান্ত সহযোগী ছিলো সাবেক স্বৈরাচার এরশাদের জাতীয় পার্টি। ১৯৮৮ সালে এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন সবদল বয়কট করলেও সেবার এরশাদকে বৈধতা দিয়েছিলো শেখ হাসিনা। কথিত আছে সেই ঋণ পরিশোধে আমৃত্যু শেখ হাসিনার অনুগত ছিলেন এরশাদ। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদ অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করলে স্বৈরাচার হাসিনার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন রওশন এরশাদ।
এরপর ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনে শেখ হাসিনা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার হন শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০২৪৩ সালে তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যপক বিরোধিতা সত্বেও নিজের স্ত্রীকে এমপি নির্বাচিত করার শর্তে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। কিন্তু সেবার আর ক্ষমতার স্বাদ বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি তারা। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে জাতীয় পার্টিও ছিটকে পড়ের ক্ষমতা থেকে।
স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেনানিবাসে সব রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে ডাক পেয়েছিলো জাতীয় পার্টি। এরপর বঙ্গভবনের বৈঠকেও অংশ নেন তার। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শুরুতে এক রকমের ফুরফুরে মেজাজেই ছিল ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটসঙ্গী স্বৈরাচার এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে সেই পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বৈঠকে ডাক পেলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারা। মূলত তাদের বিরোধিতার মুখে পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের আর কোনো বৈঠকে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি। এমনকি গত সপ্তাহে জাতীয় পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নেয়নি শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কোনো দলের নেতা ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের সঙ্গী ছিল এই জাতীয় পার্টি। ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের জন্য আওয়ামী লীগের মতো সমান দায়ী জাতীয় পার্টি।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন জাতীয় পার্টি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দাসত্বের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে, দাবির বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।