পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি অমুসলিম দেশগুলোতেও আয়োজন করা হচ্ছে উন্মুক্ত ইফতার মাহফিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও আর্জেন্টেনিয়ায় প্রতিদিন ঘটা করে হচ্ছে রমজানের ইফতার। উন্মুক্ত এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিমরাও। ইফতার এখন শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। রমজানের এই ইফতার এখন মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দ্য আর সহাবস্থানের অনন্য প্রতীক।
নিউইয়র্ক সিটির দেড় শতাধিক মসজিদসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৩ হাজারের মতো মসজিদেই রোজাদারের মধ্যে ইফতার পরিবেশনের আয়োজন করা হচ্ছে প্রতিদিন। ইফতার কর্মসূচিতে মুসলমানদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন অমুসলিমরাও। কোনো কোনো মসজিদে ব্যাচেলরদের জন্য সাহরির ব্যবস্থাও রয়েছে। পবিত্র রমজানে মুসলিম কমিউনিটির মসজিদগুলো সম্প্রীতি ও পারস্পরিক মেলবন্ধনের এ দৃষ্টান্ত মার্কিন সমাজে প্রশংসিত হচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি প্রতিটি রেস্টুরেন্টই কম দামে ইফতারির বক্স বিক্রি করছে। যদিও ইফতারির জন্য প্রতিটি পণ্যের দামই গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তারপরও রোজাদারদের সামর্থ্য বিবেচনায় রেখে গ্রোসারি এবং রেস্টুরেন্টগুলো মূল্যহ্রাসের ব্যবস্থা করেছে।
যুক্তরাজ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও ‘দ্য রমাদান টেন্ট প্রজেক্ট’ আয়োজিত ইফতারে সব ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। মূলত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মুসলিম সংস্কৃতির মাধ্যমে রোজা ভাঙতে এ আয়োজন করা হয়। যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত চারটি অঞ্চল : ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের অনেক মসজিদেই উন্মুক্ত এ ইফতার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দেশটির রমজান টেন্ট প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ওমর সালহা বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় ধরে রমজান টেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে উন্মুক্ত ইফতার উৎসব উদযাপিত হয়। এ আয়োজনে পুরো মাসজুড়ে যুক্তরাজ্যের ১০ লাখের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ব্রিটেনে আমাদের সবার অংশগ্রহণমূলক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরতা উপলব্ধি তৈরি করে এ আয়োজন।
আর্জেন্টিনার মুসলিম ও অমুসলিমরা রমজানকে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে স্বাগত জানায়। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় ইসলামিক সেন্টার ‘বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’ রমজানে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। যেমন ইফতার ও সাহরির আয়োজন করা, মুসলিম ও অমুসলিম সব ধর্মাবলম্বীর জন্য তা উন্মুক্ত রাখা, কোরআনের পাঠদান, হিফজুল কোরআন, কিরাত ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। আর্জেন্টিনায় ইফতার আয়োজনে মিষ্টান্নের প্রাধান্য থাকে। সেই সাথে থাকে খেজুর, দুধ ও সিমের উপস্থিতিও ।
কানাডা ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভে অনুযায়ী, দেশটিতে ১০ লাখেরও বেশি মুসলমান বাস করেন। কানাডার উইনিপেগের গ্র্যান্ড মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ইফতার আয়োজন করা হয় প্রতি বছরই। এবারও প্রতিদিন হচ্ছে ইফতার আয়োজন। এই আয়োজনে যেখানে মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েই অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়াও রমজানে কানাডার মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে বিশেষ উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের সব মুসলিমরা রমজান উপলক্ষে একত্রিত হন, একই উৎসবে মেতে ওঠেন। সাদা-কালোর ভেদাভেদ নেই, খাবার-সংস্কৃতি ভাগাভাগির অনন্য উৎসব রমজানে কানাডায় মুসলিমদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি করে।
মুসলমানের সাথে অমুসলিমদের ইফতার আন্তঃধর্মীয় সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠছে অমুসলিম দেশগুলোতে। এ ধরনের আয়োজন বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়তা করছে। মুসলিমদের জন্য ইফতার যেমন ইবাদতের অংশ, তেমনি অমুসলিমদের জন্য এটি ইসলামী সংস্কৃতি ও রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
এ ধরনের ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে এবং বৈচিত্র্যময় সমাজে সহাবস্থানের ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এই ইফতার সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ব, মানবতা ও সহমর্মিতার চেতনা জাগিয়ে তুলছে এবং সর্বজনীন শান্তি ও ঐক্যের পথ দেখাবে বিশ্ববাসীকে।