এশিয়ার দীর্ঘতম এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নদী। ফোরাত নদীকে আরবিতে বলা হয় নাহরুল ফুরাত। আর তুর্কিতে বলে ফিরাত। এই ফিরাত বা ফোরাত নদী দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এটি তুরস্কে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই নদী ব্যবহার করেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতার বিকাশ হয়েছিলো।

TheHolymedia – ইতিহাসের ডায়রি থেকে এই আয়োজনে থাকছে ফোরাত নদীর নানা জানা অজানা গল্প।
মূল পর্ব শুরু করার আগে অনুরোধ থাকবে আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে সাবসক্রাইব করে বেল বাটনে প্রেস করে রাখুন।

ফোরাত নদী দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর অববাহিকার আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার। ফোরাত নদীর মোট অববাহিকার মাত্র ৩০ শতাংশ তুরস্কে অবস্থিত হলেও এর ৯০ শতাংশ পানির উৎস হলো তুরস্কের উচ্চভূমি।
ফোরাত নদী প্রতি বছর দুহাজার ৮০০ কোটি ঘনমিটার পানি বহন করে। এপ্রিল ও মে মাসে নদীটি সর্বোচ্চ পানি ধারন করে। ফোরাত নদীর গভীরতা কম বলে এতে ছোট ছোট নৌকা ছাড়া আর কিছুই চলাচল করতে পারে না। এই নদীটি মুলত তার পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে পানি সর্বরাহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার অন্যতম কারন এই ফোরাত নদী। কেননা এই তিনটি দেশই তাদের কৃশি জমির সেচের জন্য ফোরত নদীর উপর নির্ভরশীল। তাই দেশগুলো নদীটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে লাভবান হতে চায়।

সিরিয়া, তুরস্ক ও ইরাক সরকার এখন পর্যন্ত ফোরাতে ১২টি বাঁধ নির্মানের ফলে ১৯৯৯ সালের পর থেকেই ফোরাতের পানি আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করে।

বিগত কয়েক বছর ধরে একসময়ের সমৃদ্ধ ইউফ্রেটিস নদীর পানির স্তর ব্যপকভাবে কমে গেছে। গত কয়েক বছরে নদীটি প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।

ফোরাতের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এর তলদেশে একটি শুড়ঙ্গের অস্তিত্ব মিলেছে। যেখানে একটি নিখুৎ বিল্ডিংয়ের অবকাঠামো ও সুসজ্জিত সিঁড়ি দেখা যায়। প্রাচীন কাহীনির বর্ণনা অনুযায়ী ব্যবিলিয়নের রানি সেমিরানিস এই সুড়ঙ্গ তৈরি করিয়েছিলেন নদী পারাপারের জন্য। সুড়ঙ্গের ওপারে এক রহস্যময় জগৎের কাহিনীও বর্ণনা করা হয়েছে প্রাচীন কাহীনিতে।

ফোরাত নদী গঠিত হয়েছে দুটি নদীর মিলনে। একটি কারা সু এবং অন্যটি মুরাত সু। নদীর তীরঘেঁষা প্রধান শহরগুলোর মধ্যে আছে সিরিয়ার রাক্কা ও দাইর আজ জর, ইরাকের রামাদি।

আঞ্চলিক রাজনীতির কারণে ফোরাত যেমন আলোচনার কেন্দ্রে তেমনি ধর্মীয় কারণেও ফোরাতের নাম মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ফোরাত নিয়ে রাসুল (সা.) খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন

মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে, ‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে জড়াবে এবং প্রত্যেক দলের শতকরা ৯৯ জন মারা পড়বে। তাদের প্রত্যেকের কামনা থাকবে হায়! বেঁচে যাওয়া মানুষটি যদি আমিই হতাম!

অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন অচিরেই একটা সময় এমন আসবে ফোরাত নদীতে স্বর্ণের খনি উম্মোচিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে সময় বেঁচে থাকবে সে যেন তার থেকে কোনো অংশ গ্রহণ না করে।

সুতরাং ফোরাত নদী শুকিয়ে যাওয়া রাসূল সাঃ এর ভবিষ্যদ্বাণীর-ই বাস্তবরুপ যদিও এখনো এতে স্বর্ণের পাহাড় ভেসে ওঠেনি।

Share.

Comments are closed.